কলকাতার বাঘাযতীনে (Baghajatin) শুভ অ্যাপার্টমেন্ট ভেঙে পড়ার ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্য। দশ বছর পুরনো এই আবাসন (Baghajatin) ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অবৈধ নির্মাণ এবং মারাত্মক ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি। অভিযোগ, আবাসন সামান্য হেলে (Baghajatin) যাওয়ার পর সেটিকে সোজা করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল এমন যন্ত্র যা মূলত গাড়ি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এটি একটি গুরুতর ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি। পৌরসভার অনুমতি না নিয়ে প্রোমোটার নিজেই এই কাজ করেছেন। হরিয়ানার কোনো সংস্থাকে দিয়ে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ ছাড়াই কাজ করা হচ্ছিল। সামান্য হেলে যাওয়া আবাসন সোজা করতে গিয়ে এত বড় বিপর্যয় ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, “রড কেটে, গাড়ি তোলার জ্যাক দিয়ে আবাসন তুলতে গিয়েছিল। এর ফলে যারা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাদের সর্বস্বান্ত অবস্থা।”
মাটির প্রকৃতি সম্পর্কেও সমস্যার কথা উল্লেখ করেন মেয়র। তিনি জানান, “হরিয়ানার মাটি হার্ড সয়েল, আর কলকাতায় গঙ্গার মাটি অনেক নরম। এখানে একটু জল পড়লেই মাটি আরও নরম হয়ে যায়। রাস্তাগুলোও অনেক সময় বসে যায়। প্রোমোটার হয়তো হার্ড সয়েলের মতো করেই পরিকল্পনা করেছিলেন, যা এখানে কার্যকর হয়নি।”
জানা গেছে, প্রোমোটার ‘নায়াগ্রা লিফটিং’ নামে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সংস্থাটি গাড়ি তোলার যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেই আবাসন সোজা করার চেষ্টা করেছিল।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস লিফটিং পদ্ধতির ত্রুটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, গাড়ি খারাপ হলে হাইড্রোলিক জ্যাক দিয়ে যেভাবে চাকা তোলা হয়, বাড়ি তোলার জন্য তার উন্নততর ভারবহনকারী যন্ত্রাংশ প্রয়োজন। কিন্তু প্রোমোটারের নিয়োগ করা সংস্থার কর্মীরা গাড়ি তোলার যন্ত্রাংশ দিয়েই কাজ করছিলেন। এই ধরনের অব্যবস্থাই এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
বর্তমানে ভেঙে পড়া আবাসনটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে শহরের অন্যান্য পুরনো আবাসনগুলির নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়েও। কলকাতা পৌরসভা এই ধরনের অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র প্রোমোটারের অবহেলার নজির নয়, বরং শহরের নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেল।