নয়াদিল্লি: ভারত এবং জাপান এই মুহূর্তে তাদের যৌথ সামরিক মহড়া ‘ধর্ম গার্ডিয়ান'(Dharma Guardian) পরিচালনা করছে, যা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতা আরও বাড়াচ্ছে। জাপানের পূর্ব ফুজি অঞ্চলে চলমান এই মহড়া চলবে ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ই মার্চ পর্যন্ত এবং এর লক্ষ্য হল শহরাঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। এই মহড়ার ফলে কোয়াড সদস্য দেশগুলির মধ্যে সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতার বৃদ্ধি ঘটছে, যা চীনকে বিশেষ উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে।
ধর্ম গার্ডিয়ান: ভারত ও জাপানের সামরিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
‘ধর্ম গার্ডিয়ান’ যৌথ সামরিক মহড়ার ষষ্ঠ পর্বে ভারত এবং জাপান একসাথে কাজ করছে। এই মহড়া কেবল দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে না, বরং কোয়াড গোষ্ঠীর সুরক্ষা কৌশলকেও দৃঢ় করবে। ভারত এবং জাপানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সামরিক কৌশলগত সম্পর্কের এই বৃদ্ধির ফলে বিশেষভাবে চীন উদ্বিগ্ন, কারণ বেইজিং ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা এবং জাপানসহ কোয়াড দেশগুলির মধ্যে বেড়ে চলা সামরিক সম্পর্ককে তার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
মহড়ার লক্ষ্য ও কৌশল
এই যৌথ সামরিক মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হল, শহরাঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা উন্নত করা। বর্তমানে, শহরাঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বাড়ছে এবং এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নতুন কৌশল প্রয়োজন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, মহড়ার সময় সেনারা তাদের কৌশল পরিমার্জন করছে এবং জটিল শহুরে পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছে।
এই মহড়ার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মডেল তৈরি করা হচ্ছে, যাতে বাস্তব বিশ্ব পরিস্থিতি প্রতিফলিত করা যায় এবং বহুজাতিক বাহিনীর মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরা হয়। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, এই মহড়ার মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহকারিতা আরও বাড়ানো হবে এবং ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা ও মানবিক মিশনে তাদের সহযোগিতা সহজ হবে।
চীনের উদ্বেগ এবং কোয়াডের গুরুত্ব
চীনের জন্য এই যৌথ মহড়াটি একেবারে নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোয়াড গোষ্ঠী – যা ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত – চীনের বিশাল সমুদ্র-বাণিজ্যিক প্রবাহ এবং অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চীন প্রথম থেকেই কোয়াডের মহড়াগুলোর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে, কারণ এটি তাদের অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
জাপান-ভারত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
ভারত ও জাপান একে অপরের বন্ধুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা শুধু তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে না, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই সামরিক মহড়ার মাধ্যমে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং সৌহার্দ্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে নির্বিঘ্নে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।
উপসংহার: সামরিক সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা
‘ধর্ম গার্ডিয়ান’ যৌথ সামরিক মহড়া ভারত এবং জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এই মহড়া কেবল দুটি দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াডের পক্ষ থেকে এই মহড়া নতুন একটি শক্তি বল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে সামরিক সহযোগিতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এটি প্রমাণ করে, ভারত এবং জাপান একত্রে সামরিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, যা তাদের পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।