আজ সকালেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন দিলীপ ঘোষ। জল্পনা ছিল, তিনি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। সেই মতোই তিনি নাড্ডার বাসভবনে পৌঁছন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ ঘোষ জানান, বিজেপি সভাপতি বাড়িতে ছিলেন না। তিনি আরও জানান, বিকেলে নাড্ডার সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) ঘিরে একের পর এক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটেই নাড্ডার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু প্রথম দফায় এই কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ না হওয়ায় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন।
বিশেষ করে, আজ প্রধানমন্ত্রীর দুর্গাপুরের সভায় দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এরমধ্যেই তোলপাড় চলছে। কয়েকদিন আগেও দিলীপ ঘোষ মোদির সভায় থাকা নিয়ে বলেছিলেন, “স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দুর্গাপুরে যাওয়ার জন্য আমাকে বলেছেন। এখনও রাজ্য নেতৃত্ব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে সবাই বসতে পারেন না। দর্শক হিসেবে ভাষণ শুনতে কারও অনুমতি লাগে না।” কিন্তু গতকাল, বৃহস্পতিবারই জানা যায়, দিলীপ ঘোষ প্রধানমন্ত্রীর সভায় থাকছেন না। আজ সকালে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তিনি মোদির সভায় গিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়াতে চান না। কর্মীরা চাইলেও তাঁর দল হয়তো চায় না যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সভায় থাকুন। তাই তিনি দুর্গাপুরে থাকছেন না।
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যগুলি দলের অভ্যন্তরে তাঁর অবস্থান এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নাড্ডার সঙ্গে তাঁর এই নির্ধারিত বৈঠক (যা প্রথম দফায় সফল হয়নি) অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
দলের অভ্যন্তরে বিভেদ: দিলীপ ঘোষের লাগাতার বিতর্কিত মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে তাঁর দূরে থাকার সিদ্ধান্ত দলের অভ্যন্তরে এক ধরণের অসন্তোষ বা বিভেদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। নাড্ডার সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎ যদি সত্যিই হয়, তবে তা এই বিভেদ মেটানোর বা অন্তত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।
জল্পনা দিলীপ ঘোষের ভবিষ্যৎ নিয়ে: বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষের দলের ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই বৈঠক তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে কী বার্তা দিতে চায়, তা নিয়েও জল্পনা চলছে।
কি বার্তা কির্ন্দ্রীয় নেতৃত্বের: নাড্ডার সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বৈঠক যদি হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে কোনও সুনির্দিষ্ট বার্তা দিতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এটি হতে পারে তাঁকে সংযত থাকার নির্দেশ, অথবা তাঁকে নতুন কোনও দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব।
বাংলার রাজনীতিতে প্রভাব: দিলীপ ঘোষের এই দিল্লি সফর এবং নাড্ডার সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য বৈঠক বাংলার বিজেপি রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে এই ধরনের আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কি এবার শেষ পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ এবং জে পি নাড্ডার সাক্ষাৎ হবে? হলে, কী নিয়ে হবে আলোচনা? দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি নতুন মোড় নেবে? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আজ বিকেলের জন্য। রাজনৈতিক মহলের নজর এখন দিল্লির দিকেই নিবদ্ধ।