সমীর সাহা,নদিয়াঃ দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপের ভট্টাচার্য্য বাড়ির রাজরাজেশ্বরী পুজো করোনা পরিস্থিতিতে দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। নবদ্বীপ পাকাটোল রোডের বনেদি বাড়ির রাজরাজেশ্বরী মাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো চিরাচরিত প্রথা মেনেই হত। এখন সেই রীতি নেই বললেই চলে তবুও নিয়ম মেনে পুরনো এই পুজো হয়ে আসছে।
এই পুজো কোন এক দৈবিক কারণে বেশকয়েক বন্ধ হয়ে যায়। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় দুর্গা মায়ের সেই নাটমন্দির। পরবর্তীতে পুজোর জায়গা পরিবর্তন করতে হয় ভট্টাচার্য পরিবারকে। কালের বিবর্তনে এখন যেমন হয় না মহিষ বলি, তেমনি বেয়ারাদের কাঁধে চেপে বিজয়া দশমীতে মা পাড়ি দেন বাপের বাড়ি থেকে কৈলাসে। বর্তমানে সুপ্রাচীন বনেদী “ভট্টাচার্য্য পরিবারের” ঐতিহ্যবাহী পুজোর জায়গা পরিবর্তন হয়েগেছে কয়েক বছর ধরে।
……………………….Advertisement……………………..
পাকাটোলের পরিবর্তে রাম গোবিন্দ রোডের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজরাজেশ্বরী দুর্গামাতার পুজো। ভট্টাচার্য বাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজো ঘিরে রয়েছে আলাদা এক উন্মাদনা। কেননা চিরাচরিত প্রথার কিছু প্রথা এখনও বজায় রয়ে গেছে। একসময়ে ভট্টাচার্য্য বাড়ি ঠাকুর দালানে জনসমাগমে ভরে থাকত। বর্তমান প্রজন্ম অতনু ভট্টাচার্য জানান পুজো উপলক্ষে বাড়ির বৈঠকখানায় চলত জমিয়ে আড্ডা, দেদার খাওয়া দাওয়া। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন,বন্ধু বান্ধবরা আসতেন।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়ির চণ্ডী মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হতো,কবিগান,পালাকীর্তন এবং ধুনচিনাচ। এমনকি অনুষ্ঠিত হতো যাত্রাপালাও। তবে সেই সময় বাড়ির অন্দরমহলে পর্দার আড়াল থেকে চণ্ডীমণ্ডপে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান দেখতেন ভট্টাচার্য্য বাড়ির মহিলারা। অতনুবাবু বলেন বলিপ্রথা বলতে মহিষবলি হতো।আর পুজোর প্রতিদিন, দুপুরে পুজোর অন্নপ্রসাদ পেতে আসতেন,বহুমানুষ। ঢাক, কাঁসর, ঘন্টার আওয়াজ শুনে পুজো দেখতে ভিড় করতেন স্থানীয় লোকজন ভট্টাচার্য্য বাড়ির নাট মন্দিরে।তিনি জানান ,দশমীর বিকেলে ভট্টাচার্য্য রাজরাজেশ্বরী মাতাকে ঢাক কাঁসর সহযোগে, বেয়ারার কাঁধে বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপের রাজপথে শোভাযাত্রা করার পর গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হতো।এই শোভাযাত্রায় সঙ্গে থাকতো রেড়ীর তেলের বাতি।
অতনুবাবু জানান সময়ের করালগ্রাসে, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় চণ্ডীমণ্ডপ, ক্রমান্বয়ে স্মৃতির পাতায় একটু একটু করে ধুলো জমতে শুরু করেছে সব ইতিহাস। শুধুমাত্র প্রমাণ হিসেবে এখনও সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে বোধনকরা শতাব্দী প্রাচীন বেলগাছটি। ইতিমধ্যেই, বেশকয়েক বছর আগের থেকেই পুনরায় ভট্টাচার্য্য পরিবারের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজরাজেশ্বরী দুর্গা মাতার পুজো শুরু হয়েছে, তবে এই মহাপুজোতে বলিপ্রথা সম্পুর্ন ভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পুজোর দিনগুলিতে প্রত্যেক দিন মধ্যাহ্নে মায়ের মহাপ্রসাদে আপ্যায়িত করা হয়, উপস্থিত সকল ভক্তদের।কিন্তু এই বছরে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে রাজরাজেশ্বরী পুজোতে চণ্ডীমণ্ডপে সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ অবাধ নয়। NO ENTRY বোর্ড লাগানো হয়েছে মহাপ্রসাদ বিতরন বন্ধ থাকবে এবং বিসর্জনের শোভাযাত্রাও হবে না বলে জানান পরিবারের বর্তমান সদস্য অতনু ভট্টাচার্য।