রাজ্য রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ভোটার তালিকা। যে কোনও নির্বাচনের পূর্বে এই তালিকা নির্ভুল করা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ভোটার তালিকা পর্যালোচনার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। ‘ভূত’ বা অযাচিত ভোটারদের (Fake Voter Card Issue) চিহ্নিত করার জন্য তৈরি হয়েছে পাঁচ দফা নীতি, যা কার্যত তৃণমূলের নির্বাচনী রণকৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নতুন নীতির উদ্দেশ্য ও প্রভাব
তৃণমূল কংগ্রেসের মতে, ভোটার তালিকায় এমন বহু নাম রয়েছে, যাদের ভোট দেওয়ার অধিকার নেই বা যাঁদের নাম একাধিকবার যুক্ত হয়েছে। এটি দূর করতে পাঁচ দফা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আসন্ন ২০২৫ সালের নির্বাচনের আগে সঠিক ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করাই দলের মূল লক্ষ্য।
এই পাঁচ দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে
১. অযোগ্য ভোটারদের চিহ্নিতকরণ: ভোট দেওয়ার অধিকার নেই এমন ব্যক্তিদের পৃথকভাবে নথিভুক্ত করা। ২. একই এপিক নম্বরে একাধিক নামের পর্যালোচনা: একই পরিচয়পত্রে একাধিক নাম থাকলে তা বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হবে।
৩. ভোটার তালিকার পুন:মূল্যায়ন: বুথভিত্তিক ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালিকার সত্যতা যাচাই করা।
৪. ভুলবশত বাদ যাওয়া ভোটারদের পুন:নিবন্ধন: যাঁদের নাম অন্যায়ভাবে বাদ পড়েছে, তাঁদের পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. অনলাইন তালিকাভুক্তির পর্যবেক্ষণ: অনলাইনে নথিভুক্ত নামগুলির অতিরিক্ত পর্যালোচনা করা।
রাজনৈতিক কৌশল নাকি গণতান্ত্রিক উদ্যোগ?
এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিভিন্ন দিক থেকে করা যেতে পারে। একদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে যে এটি ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক উদ্যোগ। অন্যদিকে, বিরোধীদের মতে, এটি নির্বাচনী কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে বিশেষ রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করা হতে পারে।
এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য জেলা পর্যায়ে পৃথক কোর কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিটি জেলায় সাংগঠনিক সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ, পঞ্চায়েত ও পুরসভার নেতারা এই কমিটিতে থাকবেন। যদিও বীরভূমের জন্য আলাদা কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি, এই জেলা বরাবরই তৃণমূলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দলীয় সিদ্ধান্তেই এখানকার কাজ চলবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য
রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য বিশাল। তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে যেখানে ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করছে, অন্যদিকে বিরোধীরা অভিযোগ করছে যে এটি আসলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার একটি চাল। বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, এই ধরনের পদক্ষেপ নির্বাচনী কারচুপির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।
তবে আশা করা যায়, ভোটার তালিকা সংশোধনের এই উদ্যোগ রাজ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এটি একদিকে যেমন প্রকৃত ভোটারদের অধিকার রক্ষার একটি পদক্ষেপ, তেমনই এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আগামী ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক এই প্রসঙ্গে নতুন নির্দেশনা আনতে পারে। আগামী নির্বাচনের আগে এই পরিকল্পনার সফলতা ও স্বচ্ছতা নির্ভর করবে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী পদক্ষেপ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর।