অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta BiswaSarma) সম্প্রতি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তিনি মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করে বলেন, “ঔরঙ্গজেব হিন্দু ধর্মকে শেষ করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং যা করতে পারেন সবকিছু করেছিলেন। কিন্তু কালের নিয়মে তিনি শেষ হয়ে গিয়েছেন। হিন্দু ধর্ম কখনো শেষ হয়নি এবং হবে না।”
এছাড়া, হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta BiswaSarma) বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নাম নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যদি রাহুল গান্ধী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন যে হিন্দু ধর্ম শেষ হয়ে যাবে, তা হবে না। আপনারা চলে যাবেন, কিন্তু হিন্দু ধর্ম শেষ হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও যোগ করেন, “আমাদের ইতিহাস ৫০০০ বছরের পুরনো। আমাদের ওঠা-নামা স্বাভাবিক। কখনও বাংলায় তৃণমূল আসবে, কখনও দেশে কংগ্রেস আসবে, তবে একদিন নরেন্দ্র মোদীও আসবেন।”
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে “অর্থহীন” বলে আক্রমণ করেছেন। কুণাল ঘোষ বলেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী এসব বলে শুধু বিভেদ তৈরি করতে চান। বাংলা হলো একটি উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক। এখানে ধর্মের নামে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প হয় না, বরং সব সম্প্রদায়ের জন্যই উন্নয়ন কাজ হয়।” তিনি দুর্গাপুজো আয়োজনের জন্য রাজ্য সরকারের সহায়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “এখানে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ নেই।”
কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ
হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি বলেন, “বিজেপি কখন থেকে হিন্দুদের ঠেকা নিয়ে বসে আছে, তা আমাদের জানা নেই। হিন্দুদের জন্য কোনো আলাদা রাজনৈতিক দল হয় না। ধর্মের জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করা ঠিক নয়।” অধীর রঞ্জন চৌধুরী আরও বলেন, “হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে আগে বলতে হবে, অসমে এনআরসি চালু করার পর যাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে তাদের কী হয়েছে? বাংলার মানুষকে বলুন, কতজনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে?”
তিনি অভিযোগ করেন, “বিজেপি ভোটের রাজনীতি করার জন্য এসব বিতর্কিত মন্তব্য করছে।”
এদিকে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতির পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতি এবং তৃণমূল ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তার সমালোচনা নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের ভোটের আগে এই ধরনের মন্তব্যের রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা চলছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয়:
হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্যগুলোর পর, বাংলার রাজনীতি আরও চর্চিত হয়ে উঠেছে, যেখানে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিতর্ক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।