Amit Shah: বিএসএফ জওয়ানদের কারণেই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি: অমিত শাহ

নিজস্ব প্রতিনিধি, বনগাঁ ঃ    ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি, তার একটাই কারণ যে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর জওয়ানরা সীমান্তে পাহারা দিয়ে দেশকে রক্ষা করছে’- এই মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বৃহস্পতিবার উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হরিদাসপুরে বিএসএফ’এর একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই মন্তব্য করেন অমিত শাহ।

বিএসএফ’এর ভূয়ষী প্রংশসা করে তিনি বলেন ‘আমি যখনই বিএসএফের কোন অনুষ্ঠানে আসি, সেখানে জওয়ানদের সাথে কথা বলি, তখন আমি নতুন শক্তি, প্রেরণা নিয়ে ফিরে যাই। কেননা আপনারা যেভাবে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন- সেটা রাজস্থান, গুজরাটের কচ্ছ-সীমান্তই হোক বা সুন্দরবনই হোক- অনুপ্রবেশ এবং পাচারকারীদের মোকাবিলা করে যেভাবে ২৪ ঘন্টা ধরে করে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন-আপনাদের এই প্রচেষ্টাই দেশকে সুরক্ষিত রাখছে।’
তিনি বলেন ‘নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গোটা দেশ সবক্ষেত্রেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের সীমা সুরক্ষিত আছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ‘মোদি সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করা। এতে যাতে কোন ফাঁক না থাকে। এই কাজে জওয়ানদের আত্মবলিদান তো আছেই, সেই সাথে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য আমাদের কাছে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আছে তার সাথেও বিএসএফের পরিচয় ঘটাতে হবে। আর সেই কারণেই আজ সমস্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন তিনটি বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) দেশের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হল।’

অবৈধ অনুপ্রবেশ, পাচার সহ সীমান্তে যে কোন নাশকতা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনেরও সহায়তা চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার অভিমত স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এই অনুপ্রবেশ এবং পাচার রুখে দেওয়া অসম্ভব। আমাদের বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে সেই সহায়তা পাওয়া যাবে। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেই সহায়তা মিলছে না তবে আগামী দিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে এমন চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে যেখানে সকলকেই সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমাদের অধিকার আছে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার এবং অনুপ্রবেশ ও পাচার মুক্ত সীমান্ত গড়ে তোলা।

তার অভিমত ‘বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে এই বেড়া কখনওই দেশকে সুরক্ষা দিতে পারে না, যতক্ষণ না আমাদের বিএসএফের সদস্যরা তাকে সুরক্ষিত রাখছে।’
এদিন হরিদাসপুরেই ‘মৈত্রী সংগ্রহালয়’ (মৈত্রী মিউজিয়াম)-এর শিলন্যাস করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই বিষয়টি উত্থাপন করে অমিত শাহ বলেন ‘সীমান্তে মৈত্রী সংগ্রহশালার শিলান্যাস প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ‘ভারত গোটা বিশ্বে মানব অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সত্তরের শতকে যখন আমাদের প্রতিবেশী দেশে (বাংলাদেশ) মানব অধিকার হরণ হচ্ছিল, সেখানকার মানুষদের ওপর অত্যাচার হচ্ছিল এবং সেই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে শরণার্থীরা যখন আমাদের দেশে আসে সে সময় বিএসএফ এবং ভারতীয় সেনা- উভয়ই বীরত্বের সাথে মানবাধিকার রক্ষা করেছিল এবং বাংলাদেশ নামক নতুন এক রাষ্ট্রের জন্ম দানের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিল।’

রাজ্যের বিরোধীদলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পথে যেতে যেতে সঙ্গে কথা হচ্ছিল তিনি আমাকে বলেছেন যে এইসব অঞ্চল দিয়ে খুব অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই বিওপি উদ্বোধন এর ফলে পাচার এবং অনুপ্রবেশ দুটোই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। এই ফ্লোটিং ভাসমান বিওপি এর কারণে এই কাজ আরো সহজ হবে।
তার অভিমত ‘সীমান্তে কাজ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সেকথা মাথায় রেখে নরেন্দ্র মোদির সরকারও সবসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানদের কষ্ট লাঘব হয়। বিএসএফের সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে নারীদের যোগদানের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে অমিত শাহ বলেন ‘পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী জওয়ানরাও সমানভাবে সীমান্ত প্রহরার কাজ করে যাচ্ছে।’

এদিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, নিশিত প্রামাণিক, স্বপন মজুমদার, রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির সুকান্ত মজুমদার, বিএসএফ ডিজি পঙ্কজ কুমার সিং আপিএস, এডিজি (ইস্টার্ন কমান্ড) যোগেশ বাহাদুর খুরানিয়া, আইপিএস সহ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

দুই দিনের সফরে এদিন সকালেই দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে নামেন স্বরাষ্টমন্ত্রী। সেখান থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শন করেন তিনি। পরে সুন্দরবনের পানিতে অবস্থিত ৬ টি আধুনিক ভাসমান বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি)-সতলজ, নর্মদা, কাবেরী, গঙ্গা, সবরমতি, কৃষ্ণা এবং সতলজ বিওপিতে একটি বোট অ্যাম্বুলেন্স এর উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে তিনি চলে আসেন হরিদাসপুর সীমান্তে।

পরে বিকালের দিকে তিনি যান শিলিগুড়িতে, সেখানেও একাধিক কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। শুক্রবার কোচবিহারে তিনবিঘা করিডর পরিদর্শনে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর বিকালে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা, পরে রাতেই কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Exit mobile version