সুপারি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন কৃষ্ণগঞ্জের গৃহবধূ

সমীর সাহা,নদিয়াঃ প্রকৃতির কত উপাদান কত তার অপরূপ শোভা এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আর সেই প্রকৃতির সৃষ্টি  উপাদান যা আকৃতিতে ক্ষুদ্র হলেও সেটা দিয়েও যে সুন্দর কিছু বানানো যায় যা সকলকে আকৃষ্ট করে তোলে।কত সুন্দর রূপ দেওয়া যায় যা সবাইকে মোহিত করে তোলে। এবার তারই প্রমান দিলেন নদীয়া জেলার এক গৃহবধূ।

সুপারি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন কৃষ্ণগঞ্জের গৃহবধূ পাপিয়া কর। প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুনত্ব উপকরণ দিয়ে দুর্গা প্রতিমা গড়েন তিনি।আর তার মধ্যে দিয়ে নাকি বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পান এই পাপিয়া। এবার সেই প্রতিমা গড়েছেন শুধু মাত্র সুপারি দিয়ে এবং বেশ নজরকাড়া প্রতিমা হয়েছে এবার।

কি থেকে আপনার এমন অনুপ্রেরণা জানতে গেলে তিনি তুলে ধরলেন রবীন্দ্রনাথের একটি  উক্তি, যা সব সময় অনুপ্রাণিত করে পাপিয়াকে—

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,

একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।

পাপিয়ার কথা, আমাদের চোখের সামনে প্রকৃতি এতো সুন্দর করে তার উপাদান ছড়িয়ে রেখেছে যা আমরা দেখেও দেখি না। একটি ছোটো সুপারি দিয়েও যে সুন্দর মূর্তির রূপ দেওয়া যায় তেমনি কিছু করার চেষ্টা করেছি। মানুষের কাছে সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে এবার তিনি প্রায় দু’কেজি সুপারি দিয়ে তৈরি করেছেন দুর্গা প্রতিমা। চাল চিত্র সহ প্রতিমার উচ্চতা এক ফুট চার ইঞ্চি। দুর্গা মূর্তির উচ্চতা ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি লক্ষী এবং সরস্বতী। গণেশ,কার্তিক আর অসুর সাড়ে ৪ ইঞ্চি।

পাপিয়া প্রতি বছরই কিছুনা, কিছু নতুনত্ব জিনিষ দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। কখনও মাটি, কখনও ভুট্টা,কখনও পিচ বোর্ড ইত্যাদি সামগ্রী। আর বছর বছর সেই প্রতিমার বিক্রি করে যে অর্থে উপার্জন হয়। তা দিয়ে তিনি কখনও অনাথ পথশিশু, কখনও ইটভাটার শ্রমিক,কখনও মানসিক ভারসাম্যহীন বা আদিবাসী পরিবারের সন্তানদের  নতুন জামা প্যান্ট তাদের হাতে তুলে দিয়ে পুজোর আনন্দে ওদেরকে সামিল করেন।

পাপিযার স্বামী অমরেশ সবজি বিক্রেতা। একমাত্র ছেলে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পাপিয়া সংসারের কাজকর্ম সবকিছু বজায় রেখে কিছু না কিছু সামাজিক কাজ করেন বছরভর। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন।কখনো পিছিয়ে পড়া অবহেলিত পথ শিশুদের নিয়ে স্কুল,কখনও বা দুঃস্থ নিপীড়িত মানুষদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য।

         …………………..Advertisement…………………

এলাকায় মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নতুন কিছু কাজ শিখিয়ে। যাতে ওরা নিজেরা কিছু উপার্জন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। সারা বছর কিছু না কিছু সামাজিক কাজ করে যান পাপিয়া। আর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নিজের এলাকায় নন বিভিন্ন সংস্থা থেকে সম্মানিত হন তিনি। পাপিয়া জানান করোনার আবহের মধ্যে বড় প্রতিমা নয়। তার তৈরির এই ছোট প্রতিমার বিক্রির অর্থ দিয়ে এবারও চান অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে।