বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠে বা কর্মস্থলে নারীদের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, তাঁদের জন্য কর্মপরিসরে কিছু সুযোগ-সুবিধা এখনো সীমিত। মহিলাদের মাসিক(Menstrual Leave)ছুটি বা পিরিয়ড ছুটি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয় হয়ে আসছে। কিছু প্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য পিরিয়ড ছুটি চালু করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে কোনও নিয়ম ছিল না। তবে সম্প্রতি এল অ্যান্ড টি-র চেয়াম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যমের একটি ঘোষণা দেশের নারীদের জন্য নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পিরিয়ড ছুটির ঘোষণা: মহিলাদের জন্য নতুন সুযোগ
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পূর্বে এল অ্যান্ড টি-র চেয়াম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যম ঘোষণা করেছেন যে, কোম্পানিতে কর্মরত মহিলারা তাদের মাসিক (পিরিয়ড) ছুটি হিসেবে একদিন ছুটি নিতে পারবেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যেটি কর্মস্থলে নারীদের স্বাস্থ্য ও আরাম নিশ্চিত করার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এল অ্যান্ড টি-র ৬০,০০০ কর্মচারীর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ৯ শতাংশ, অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তে প্রায় ৫ হাজার নারী উপকৃত হবেন।
পিরিয়ড ছুটি: একটি নতুন ধারণা
এল অ্যান্ড টি-র এই পদক্ষেপ দেশের পিরিয়ড ছুটির চলমান বিতর্কে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অনেক দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলোতে পিরিয়ড ছুটি বেশ কিছু বছর ধরেই চলছে। তবে ভারতে এই বিষয়ে এখনও কার্যকরভাবে কোনও সরকারি আইন বা নীতিমালা গৃহীত হয়নি। তবে বিহার, কেরালা, সিকিম, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যে পিরিয়ড ছুটির নিয়ম চালু রয়েছে। এসব রাজ্যে নারীরা পিরিয়ডের সময় একটি দিন ছুটি নিতে পারেন, যা তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
এছাড়া, কর্ণাটকও বেসরকারি এবং সরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ছয় দিন পিরিয়ড ছুটি দেওয়ার কথা চিন্তা করছে, যা এই ধরনের উদ্যোগের প্রসারের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

কর্মক্ষেত্রে নারীর স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত
এসএন সুব্রহ্মণ্যমের এই ঘোষণায় প্রথমেই যে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে, তা হল কর্মক্ষেত্রে নারীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য। মাসিকের সময় নারীশরীর যে অস্বস্তি এবং ব্যথার মধ্যে দিয়ে যায়, সেটা একটি সাধারণ বিষয়। পিরিয়ড ছুটি নারীদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি সে সময়ে তাদের কঠিন শারীরিক অবস্থা থাকে। এই ছুটির মাধ্যমে নারীদের আরও সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের কাজের মান উন্নত করতে সহায়তা করবে।
পিরিয়ড ছুটি নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
এখন পর্যন্ত, পিরিয়ড ছুটি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নানা ধরনের আলোচনা ও প্রয়াস চলছে। তবে এল অ্যান্ড টি-র এই ঘোষণার মাধ্যমে যে সাড়া এসেছে, তা ভবিষ্যতে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। যখন একজন বড় প্রতিষ্ঠান এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন তা একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়, যা অন্যান্য কোম্পানিগুলোকেও নারীদের সুবিধার দিকে আরও মনোযোগী হতে উৎসাহিত করবে।
যদিও পিরিয়ড ছুটি নারীদের জন্য শুধু একটি ছুটি নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এস এন সুব্রহ্মণ্যমের ঘোষণার মাধ্যমে এল অ্যান্ড টি দেশব্যাপী নারীদের জন্য নতুন একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আশা করা যায়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও এই ধরনের উদাহরণ অনুসরণ করবে এবং নারীদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার দিকে আরও গুরুত্ব প্রদান করবে। মহিলাদের জন্য এরকম সাশ্রয়ী এবং সহায়ক সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের জন্য নয়, বরং সমাজের জন্যও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।