পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা এবং তার জবাবে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভায় চলমান বিতর্কে (Parliament Session) কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এবং মনীশ তিওয়ারিকে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেওয়ায় দলের অন্দরে অসন্তোষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মনে করিয়ে দেওয়া যাক যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরির জন্য বিদেশে পাঠানো বহুদলীয় প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে মোদী সরকার এই দুই নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকেই কংগ্রেস শশী থারুর এবং মনীশ তিওয়ারির উপর ক্ষুব্ধ।
কংগ্রেস নেতৃত্ব আগে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিল যে থারুর এবং তিওয়ারিকে কেন প্রতিনিধিদলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এখন সংসদে এই দুজনকে বিতর্কের সুযোগ দিতে দলের অস্বীকৃতি প্রশ্ন তুলেছে যে কংগ্রেস কি তাদের নিজস্ব সক্ষম এবং সোচ্চার কণ্ঠস্বরকে দমন করছে? এই পদক্ষেপ কেবল দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষকেই প্রকাশ করছে না বরং বিজেপিকে কংগ্রেসকে লক্ষ্য করার সুযোগও দিচ্ছে। বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডাও মন্তব্য করেছেন যে কংগ্রেস নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে শশী থারুরকে কথা বলতে দিচ্ছে না। তবে তিনি আরও যোগ করেছেন যে “জাতীয় স্বার্থে থারুরকে কেউ থামাতে পারবে না।”
শশী থারুর এই বিতর্কে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছেন এবং কেবল একটি শব্দ বলেছেন – “মৌনব্রত”। অন্যদিকে, মনীশ তিওয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দেশাত্মবোধক গানের লাইন শেয়ার করে পরোক্ষভাবে তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন – “হ্যায় প্রীত জাহান কি রীত সাদা, ম্যায় গীত ওয়াহান কে গাতা হুঁ, ভারত কা রাহানে ওয়ালা হুঁ, ভারত কি বাত সুনাতা হুঁ।” তিওয়ারির এই বার্তাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তিনি দলের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন।
সূত্র বলছে, কংগ্রেস দলের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা রয়েছে যাতে সাংসদদের (Parliament Session) বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। এই নীতির অধীনে, শশী থারুরকে বন্দর বিলের উপর কথা বলতে বলা হয়েছিল কারণ এটি তার তিরুবনন্তপুরম নির্বাচনী এলাকার ভিঝিনজাম বন্দরের সাথে সম্পর্কিত। আসন্ন ক্রীড়া বিলের উপর কথা বলার জন্য মনীশ তেওয়ারিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, এই যুক্তি দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলিকে শান্ত করতে সফল হচ্ছে না। সমালোচকরা বলছেন যে শশী থারুর এবং মনীশ তেওয়ারির মতো অভিজ্ঞ এবং প্রভাবশালী বক্তাদের জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুতর বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।
যদি দেখা যায়, এই বিতর্ক কংগ্রেসের ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে, বিজেপি এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, অন্যদিকে, দলের ভেতরে অসন্তোষের কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে। যদি কংগ্রেসকে তার নিজস্ব সিনিয়র এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতাদের পাশে থাকতে দেখা যায়, তাহলে এটি দলের ঐক্য এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে, কংগ্রেস বলছে যে দলটি শশী থারুরকে সংসদীয় বিতর্কে (Parliament Session) বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু তিনি সেই সময় প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তবে, পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্ক জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুতর বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে, কংগ্রেস কর্তৃক শশী থারুর এবং মনীশ তিওয়ারির মতো সিনিয়র নেতাদের লোকসভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেওয়া কেবল দলের কৌশলগত ভুল বলেই বিবেচিত হচ্ছে না, বরং এটি বিজেপিকে আক্রমণ করার জন্য একটি সহজ সুযোগও দিচ্ছে। আগামী দিনে কংগ্রেস কীভাবে এই বিতর্ক মোকাবেলা করে এবং তারা তাদের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে কিনা তা দেখা আকর্ষণীয় হবে।