সাড়ে ৪০০ বছরের পূজো বনেদী বাড়িতে, নবমীতে আসতেন শ্রীরামকৃষ্ণ

পল্লব হাজরা, দক্ষিণেশ্বরঃ  পরিবারের সকলকে এক ছাদের তলায় বেঁধে রাখায় বার্তা নিয়ে শুরু হয়েছিল একচালা ঠাকুরে সপরিবারে দেবীর আবাহন। সেরকম ভাবেই একচালা ঠাকুরের দেবী আবাহন বেঁচে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন বনেদি বাড়ি গুলোতে।

প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর ধরে রীতি মেনে আজও দেবী দুর্গা পূজিত হন দক্ষিণেশ্বরের বড় বাড়িতে। দুর্গাপূজোয় থিমের রমরমা দেখা গেলেও বনেদি বাড়ির পুজো গুলোতে আজও ঐতিহ্য মেনে পূজিত হন দেবী দুর্গা।
প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রধান সেনাপতি প্রাণবল্লভ বাচস্পতির হাত ধরে দুর্গাপূজার সূচনা হয় দক্ষিণেশ্বরের বাচস্পতি পাড়ার এই বড় বাড়িতে। কথিত আছে বড় বাড়ির এই পুজোয় উপস্থিত হতেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।

 বংশপরম্পরায় বাড়ির ঠাকুর দালানে একই কাঠামো তে প্রতিমা গড়ে সাক্তমতে দেবী দুর্গা পূজিত হন এই বাড়িতে। এক চালায় প্রতিমা তৈরি হয় বাড়ীর অন্দরে। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে তিনটি ধাপে প্রস্তুর করা হয় মাতৃ প্রতিমা। প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা ঘটে। এরপর চতুর্থীর দিন দেবীর কাঠামো পূজো হয় ষষ্ঠীতে দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করা হত বেদিতে। সপ্তমীর সকালে কলা বউ স্নানের মধ্যেও রয়েছে ঐতিহ্যর ছোঁয়া। বাড়ীর মহিলারা অঙ্গনেই কলা বউ স্নান করান।

প্রথা মেনে আজও বড় বাড়ীতে চলে আসছে কুমারী পুজো। মৃৎ শিল্পী সহ ঢাকি এই বাড়ীতে বংশ পরম্পরায় কাজ করে আসছেন। এক সময় পশুবলি হলেও কালের পরিবর্তনে তা এখন পুরোপুরি বন্ধ। নবমীর দুপুরে শ্রী রামকৃষ্ণ দেব আসতেন এবং দীর্ঘক্ষণ ঠাকুর দালানে বসে পুজো দেখতেন বলে জানান বড়বাড়ির অন্যতম সদস্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

প্রতিপদ থেকে মাকে দেওয়া হয় অন্ন ভোগ বিশেষত দশমীতে পান্তা ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। রান্নায় ভোজ্য তেলের পরিবর্তে ব্যবহার হয় মাখন।দশমীর দিন গঙ্গা বক্ষে প্রতিমা নির্জনের মধ্যদিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

বর্তমানে বড় বাড়ীর মূল ফটকে রয়েছে সিংহ দুয়ার। বাড়ীর অন্দরে মাতৃ মন্দির, দালান সহ রয়েছে নাট মন্দির। বাড়ীর মধ্যে রয়েছে শিব লিঙ্গ। দুর্গা পুজো ছাড়াও মনসা পুজো, শিবরাত্রি, কালীপুজা সহ দোলযাত্রা ঘটা করে পালিত হয় বলে জানালেন, বাচস্পতি পাড়ার বড় বাড়ির ১১তম প্রজন্মের অন্যতম সদস্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

Exit mobile version