হিমালয়ের কোলে এক অপূর্ব দেশ ভুটান, যেখানে প্রতিটি পর্বতশৃঙ্গ, শান্ত নদী, এবং নৈসর্গিক দৃশ্য চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। একদিকে, স্বাভাবিক জীবনধারা ও ঐতিহ্য, অন্যদিকে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক (Train to Bhutan)। ভুটান বরাবরই ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণপিপাসুদের জন্য প্রিয় গন্তব্য। তবে সেখানে পৌঁছানোর জন্য বেশ কিছু কাঠখড় পোড়াতে হত, বিশেষত সড়কপথে দীর্ঘ যাত্রার কারণে। কিন্তু এবার ভারতীয় রেলওয়ে যে পদক্ষেপটি নিয়েছে, তা বদলে দিচ্ছে ভুটান ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে।
ভারতীয় রেলওয়ে ও ভুটানের এক নতুন যুগ
ভুটান ও ভারতীয় রেলওয়ের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হতে চলেছে। অসমের কোকরাঝাড় থেকে ভুটানের গেলেফু শহর পর্যন্ত নির্মিত হবে এক দীর্ঘ রেলপথ। ৬৯.০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ প্রকল্প, শুধু ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নয়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং পর্যটন বৃদ্ধির জন্যও একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে।
রেলপথের মাধ্যমে ভুটান পৌঁছানো হবে আরও সহজ এবং দ্রুত। বিশেষ করে, যারা সড়কপথে বা বিমানে যেতে গিয়ে অসুবিধার মুখোমুখি হন, তারা এবার এক ট্রেনেই পৌঁছতে পারবেন হিমালয়ের এই শান্ত দেশে। এই রেলপথ প্রকল্পের অন্তর্গত ৬টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে— বালাজান, গরুভাসা, রুনিখাতা, শান্তিপুর, দাদগিরি এবং গেলেফু। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে দুটি বড় রেল সেতু, ২৯টি প্রধান সেতু, ৬৫টি ছোট সেতু, একটি রেল ব্রিজ এবং ৩৯টি রোড আন্ডারপাস তৈরি করা হবে, যা যাত্রাকে আরও সহজ এবং নিরাপদ করে তুলবে।
পথের মাঝে এক রোমান্টিক যাত্রা
ভুটান রেলপথে যাত্রা শুরু হলে, শুধু যাত্রাই নয়, তা একটি রোমান্টিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে। অসমের সবুজ বনাঞ্চল, পাহাড়ি রাস্তা, নদী এবং মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নীচে এক সুন্দর ভ্রমণ শুরু হবে। খোলা জানালা দিয়ে প্রবাহিত হাওয়া, ভুটানের পাহাড়ের সৌন্দর্য, গ্রামের মিষ্টি দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ— এক কথায়, এই যাত্রা হবে ভ্রমণকারীদের জন্য এক অপূর্ব মঞ্জিল।
বাঙালি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তো এটা এক নতুন রোমাঞ্চের সুযোগ। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাত্রা শুরু করে, কোকরাঝাড় হয়ে গেলেফু পৌঁছানো হবে এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অন্যদিকে রেলপথের আনন্দ— এটি হবে এক নিঃসন্দেহে অসাধারণ সফর।
বাণিজ্য ও পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা
এছাড়া, ভুটানে রেলপথ স্থাপিত হলে শুধু পর্যটকদেরই লাভ হবে না, ব্যবসায়ীরা এবং তীর্থযাত্রীরাও উপকৃত হবেন। ভুটান ও ভারতীয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত হবে, পাশাপাশি পর্যটনও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। ভুটানে ভারতীয়দের জনপ্রিয়তা বিশেষ করে হানিমুন ডেস্টিনেশন হিসেবে এই রেলপথ এক বিশাল সুবিধা এনে দেবে।
বর্তমানে ভারতীয়রা বিনা ভিসা-পাসপোর্টে ভুটানে যেতে পারলেও, সড়কপথে যাত্রা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তবে রেলপথের মাধ্যমে সেই যাত্রা আরো দ্রুত এবং সহজ হয়ে উঠবে। ভুটানের রাজধানী থিম্পু কিংবা পারো শহরে পৌঁছানো যাবে কম খরচে এবং সুরক্ষিতভাবে।
ভুটান ভ্রমণের নতুন দিগন্ত
ভারতীয় রেলওয়ের এই প্রকল্প দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে এবং ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ভুটানকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে। রেলপথে ভুটান যাওয়ার এই নতুন ব্যবস্থা স্বপ্নের মতো, যেখানে একদিকে হিমালয়ের শীর্ষে পৌঁছানোর অনুভূতি এবং অন্যদিকে, মনের শান্তি ও আরাম। তো, এক নতুন দিগন্তের সূচনা, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অপরূপ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।