বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ বরাবরই বিতর্কিত। একটি দেশকে অস্ত্র দিয়ে অন্য একটি দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার পাশাপাশি, তাদের খনিজ সম্পদও নিজের নিয়ন্ত্রণে (US Minerals-Weapons Deal) নিতে চায় আমেরিকা। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখা যায়, ইউক্রেনের মত দেশগুলোর পাশাপাশি আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোও এই ধরনের চুক্তির শিকার হয়েছে। এর ফলে, এসব দেশের সশস্ত্র সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা হারিয়েছে সেসব দেশের সরকার।
ইউক্রেনে অস্ত্রের বিনিময়ে খনিজ সম্পদের চুক্তি
যুদ্ধের মাঝে অস্ত্র সরবরাহের জন্য আমেরিকা ইউক্রেনকে ৫০ কোটি ডলারের খনিজ সম্পদ চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়ার সাথে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই এই চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারে, যেখানে আমেরিকা ইউক্রেন থেকে মূল্যবান খনিজ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তে অস্ত্র সরবরাহ করবে। এর আগে, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোও একই ধরনের চুক্তির শিকার হয়েছে।
আফগানিস্তানে খনিজ সম্পদ এবং অস্ত্রের চুক্তি
২০১৭ সালে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ চুক্তির প্রস্তাব দেন, যেখানে লিথিয়াম এবং অন্যান্য মূল্যবান খনিজ পদার্থের উৎস ছিল। আমেরিকা গনি সরকারের অস্ত্র সরবরাহ করে, তবে ২০২১ সালে যখন তালেবান আফগান বাহিনীকে পরাজিত করে, গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তালেবানরা সেই চুক্তি বাতিল করে দেয় এবং আফগানিস্তান আজও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশে শক্তি ভারসাম্যের পরিবর্তন
বাংলাদেশেও একই কাহিনি ঘটেছে। শেখ হাসিনার সরকার আমেরিকার সাথে খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত চুক্তি করতে চেয়েছিল, তবে পর্দার আড়ালে একাধিক রাজনৈতিক চক্রান্তের ফলে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। পরবর্তী সময়, বাংলাদেশ এলএনজি গ্যাসের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা আগামী ২০ বছর ধরে আমেরিকায় ৫০ লক্ষ টন এলএনজি সরবরাহের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে।
সিরিয়ার ধ্বংস এবং আমেরিকার ভূমিকা
২০১৭ সালে, আমেরিকা সিরিয়ার তেল সমৃদ্ধ এলাকাগুলো থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। সিরিয়ায় যুদ্ধের ফলে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং সিরিয়ার সরকার প্রায় পতন হয়। এরপর, সিরিয়ার যোদ্ধারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করলে দেশটি একটি অগোছালো রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। বর্তমানে, সিরিয়ায় কোনো কার্যকর সরকার নেই এবং ইসরাইলও সিরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।
বিশ্বের অস্থিরতার কারণ আমেরিকার আগ্রাসন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমেরিকার এই আগ্রাসী নীতি অনেক দেশকে না শুধু রাজনৈতিকভাবে অস্থির করেছে, বরং তাদের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনমানকেও বিপর্যস্ত করেছে। অস্ত্রের বিনিময়ে খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতি পৃথিবীকে একে একে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্ব শান্তির জন্য বড় হুমকি।
কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
আমেরিকার খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং অস্ত্র সরবরাহের ইতিহাস বিশ্ব রাজনীতিতে এক অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। আফগানিস্তান, সিরিয়া, বাংলাদেশ এবং বর্তমানে ইউক্রেন, এসব দেশ আমেরিকার আগ্রাসী নীতির ফলে সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, এসব দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং তাদের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।