ভারত ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা করছে না (Von Der-PM Modi Meeting)বলে স্পষ্ট করেছে। এই বিষয়ে ভারতীয় সরকারের তরফে একটি নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে, যা আগামীদিনে ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন ভারত সফরে আসছেন, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন।
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়টি খারিজ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে ভারত এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে যে তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে না এবং এমন কোনো প্রস্তাবের সমর্থন করবে না। এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বৈঠকে ইউরোপীয় নেত্রী উরসুলা ভন ডের লেইনের কাছে পরিষ্কার করবেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় ভারতের অবস্থান
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউক্রেনে আক্রমণের পর, এবং তারা চায় ভারতও এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর সমর্থন করুক। তবে ভারত এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার সমর্থন করে না। এই বিষয়টি মোদী ও ভন ডের লেইন-এর বৈঠকে উঠে আসবে, যেখানে ভারত তার স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখে আলোচনা করবে।
ইইউ-ভারত কৌশলগত সম্পর্কের নতুন মাত্রা
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন ভারত সফরের প্রথম দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি বলেন, “এটি দ্বন্দ্ব এবং প্রতিযোগিতার সময়, এবং এসময় বিশ্বস্ত বন্ধুদের প্রয়োজন। ইউরোপের কাছে ভারত কেবল বন্ধু নয়, বরং একটি কৌশলগত মিত্র।”
এই সফরটি ভারত-ইইউ সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দুই দশকের কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। ২০২৩ সালের মে মাসে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকের পর এটি দ্বিতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, যা ব্যবসা ও প্রযুক্তি কাউন্সিল (টিটিসি)-এর আওতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ভারত-ইইউ সম্পর্ক গভীর করতে পদক্ষেপ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর উরসুলা ভন ডের লেইনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, “আজ দিল্লিতে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইনের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি আনন্দিত। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয়। এই সফরে ভারতীয় মন্ত্রী এবং ইইউ কলেজ অফ কমিশনারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ভারত-ইইউ সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়টি প্রমাণ করছে।”
ইউরোপীয় কমিশনের সদস্যরা ভারত সফরের মাধ্যমে দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে আগ্রহী, এবং এটি ভারতের আন্তর্জাতিক কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক নীতির অগ্রসরতা
ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তবে এর পাশাপাশি দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক নীতির সঙ্গেও কোনও আপস করতে চায় না। এর মাধ্যমে ভারত নিজেদের স্বার্থের সুরক্ষা করতে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
এই বৈঠকটি ভারত-ইউরোপীয় সম্পর্কের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যেখানে উভয় পক্ষ নিজেদের কৌশলগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করবে।