গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম), আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করেছে। দলের তরফে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, একটি নির্দিষ্ট নম্বরে মিস্ড কল দিলেই মিম-এর সদস্য হওয়া যাবে। মিমের এই নতুন উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছে, এবং আগামী বিধানসভা (Assembly Election 2026) নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মিমের রাজনৈতিক রণকৌশল
মিম পশ্চিমবঙ্গে তার সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সদস্য সংগ্রহ করছে। বিশেষত সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, উপজাতি, এবং অনগ্রসর শ্রেণি—এই সব অংশের প্রতি দলের মনোযোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মিম পশ্চিমবঙ্গের বহু ভোটব্যাংককে একত্রিত করতে চাইছে, যা তাদের দলের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
এমনকি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মিস্ড কলের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের একই পন্থা অবলম্বন করে যেটি তাদের সফলতা এনে দিয়েছিল। এবার মিমও সেই কৌশল অনুসরণ করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এটি একদিকে যেমন দলের জনসমর্থন বাড়াবে, তেমনি অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠে প্রভাব বিস্তারেও সহায়ক হবে।
পশ্চিমবঙ্গে মিমের প্রবৃদ্ধি
মিমের পথচলা রাজ্যে শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম বর্ধমান জেলা থেকে। সে বছর, নীলবাড়ির বিধানসভা নির্বাচনে মিম রাজ্যে সাতটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে আসানসোল উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিল তৃণমূল ছেড়ে মিম-এ যোগ দেওয়া নেতা দানিশ আজিজ। যদিও ওই কেন্দ্রে তারা মাত্র ১৫১৪টি ভোট পেয়েছিল, তবুও তা ছিল দলের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন, দল আরও বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা তাদের প্রভাবের পরিধি আরও বাড়াতে সহায়ক হবে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও মিমের পরিকল্পনা
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election 2026) ২০২৬ সালের পূর্বে অনুষ্ঠিত হবে এবং মিমের প্রধান লক্ষ্য হবে নির্বাচনে বড় ধরনের কৌশলগত সাফল্য অর্জন করা। দলটি মনে করছে যে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু এবং নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে তাদের উপস্থিতি দৃঢ় করার মাধ্যমে তারা রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, পূর্ববর্তী নির্বাচনী ফলাফলগুলির মাধ্যমে প্রমাণিত ভোটব্যাংকগুলোতে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে মিমের প্রভাব আগামী দিনে বড় হতে পারে যদি তারা তাদের লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়। মিমের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রাথমিক লক্ষণগুলোই এই দিকটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা পশ্চিমবঙ্গে এক শক্তিশালী রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির আধিপত্যের মধ্যে মিম একটি শক্তিশালী তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠতে পারে, বিশেষত যদি তারা সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক এবং অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়।
পাশাপাশি, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে মিমের উপস্থিতি তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির ভোটব্যাংক ভাগাভাগির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসবে। যদি মিম পশ্চিমবঙ্গে তাদের অবস্থান মজবুত করতে পারে, তবে আগামী নির্বাচনে এটি রাজ্যের রাজনৈতিক প্যাচওয়ার্কে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা, যে মিমের পশ্চিমবঙ্গে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি তাদের রাজনীতির পরিসরে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। যদিও তাদের ভোটে প্রভাব সুনির্দিষ্ট নয়, তবে দলটি যদি সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে সমর্থন বাড়াতে সক্ষম হয়, তবে তা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন করে রূপান্তরিত করতে পারে। এভাবে, পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনে মিম একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যা পুরো রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।