নয়াদিল্লি: বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা এক বিতর্কিত বিলকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনায় উত্তাল হয়ে উঠল সংসদ (Parliament)। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল, যা অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী ৩০ দিনের বেশি হেফাজতে থাকলে তার মন্ত্রিত্ব খোয়া যাবে, তার বিরোধিতায় লোকসভায় প্রবল বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। বিলের কপি ছিঁড়ে শাহকে লক্ষ্য করে ছোড়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটে। পরে এই বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে বাধ্য হয় সরকার।
বিতর্কিত বিলটিতে কী আছে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলটিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে। বিল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্র বা রাজ্যের অন্য কোনো মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন থেকে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন্ত্রিত্ব হারাবেন। এখানে ‘গুরুতর অপরাধ’ বলতে সেইসব অপরাধকে বোঝানো হয়েছে যার জন্য পাঁচ বছর বা তার বেশি জেল হতে পারে। একই সঙ্গে শাহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার (সংশোধনী) বিল এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিলও পেশ করেন।
সংসদে নজিরবিহীন বিক্ষোভ
শাহ এই তিনটি বিল পেশ করতেই লোকসভায় তুমুল হট্টগোল শুরু করে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। স্লোগান দিতে দিতে বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে আসেন এবং বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। এমনকি ছেঁড়া কাগজ দলা পাকিয়ে শাহকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, বিল পেশের সময় শাহকে তার আসন ছেড়ে চতুর্থ সারিতে গিয়ে বসতে হয় এবং ২০ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী তাকে ঘিরে রাখেন।
বিরোধীদের মূল অভিযোগ
কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি, কেসি বেণুগোপাল, এবং মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি-সহ বিরোধী নেতারা একযোগে এই বিলের বিরোধিতা করেন। তাদের অভিযোগ, এই বিলটি ভারতের সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, এই আইনটি বিজেপির হাতে থাকা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে (যেমন ED, CBI) রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেবে। এর মাধ্যমে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের ইচ্ছাকৃতভাবে বিপদে ফেলা হতে পারে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এই বিলকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন।
অনলাইন গেমিং বিল পাশ
সংসদে বিতর্কের মধ্যেই, বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ ধ্বনিভোটে লোকসভায় পাশ হয়ে যায়। এই বিল অনুযায়ী, আর্থিক লেনদেনে যুক্ত সমস্ত ধরনের অনলাইন গেমিং ভারতে নিষিদ্ধ হচ্ছে। এই বিল আইন হলে অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলোর ওপর ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ৩ বছর পর্যন্ত জেলের সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে ফ্যান্টাসি স্পোর্টস গেমিং সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎও প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যদিও তারা নিজেদের অবৈধ জুয়ার সঙ্গে যুক্ত নয় বলে দাবি করে।
এই বিল কার্যকর হলে অনলাইন গেমিং শিল্পে কর্মরত প্রায় দুই লক্ষ মানুষ কাজ হারাতে পারেন এবং সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকার জিএসটি রাজস্ব হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্যসভাতেও ওয়াকআউট
লোকসভার পাশাপাশি বুধবার রাজ্যসভাতেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক পরিমার্জন (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানান। দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর বিরোধী দলের সাংসদরা অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।