মদনমোহন সামন্ত, কলকাতাঃ ঊষার আলো ফোটার আগেই শরীর খারাপ বোধ করায় বুধবার রাতে দু’বার বমি করেছিলেন ঊষা গাঙ্গুলী। চিকিৎসককে দূরভাষে জানান তিনি। পরামর্শ মত ওষুধ খেয়ে শুতে যান । দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে চিকিৎসকের আসার কথা হয় বৃহস্পতিবার সকালে। কিছুদিন আগে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তারই মাঝে বুধরাতের ঘুম ভাঙার পরোয়া না করে জীবনমঞ্চ থেকে পর্দার আড়ালে চলে যান নাট্যনির্দেশক, অভিনেত্রী, রঙ্গকর্মীর প্রতিষ্ঠাত্রী ঊষা গাঙ্গুলী । শোকস্তব্ধ হয়ে যায় নাট্যজগত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
জানা গিয়েছে, সকালে তাঁর পরিচারিকা এসে তাঁকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। চিকিৎসক এসে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক এলেও চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সেরিব্রাল অ্যাটাকে চিরনিদ্রায় চলে গেলেন ঊষা গাঙ্গুলী ।

জন্মেছিলেন ১৯৪৫ সালের ২০শে আগষ্ট রাজস্থানের যোধপুরে। বাবা নাগেশ্বরপ্রসাদ পান্ডে। স্বামী কমলেন্দু গাঙ্গুলী। মরুথাপ্পা পিল্লাই, মঞ্জুলিকা রায়চৌধুরী ও নদিয়া সিংহের কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে সর্বভারতীয় অগুনতি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেছেন ভরতনাট্যম জানা ঊষা। ১৯৭০ সালে সংগীত কলামন্দির নাট্যদলে যোগদান ।
মৃচ্ছকর্টিক নাটকে বসন্তসেনার চরিত্রে অভিনয় তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। এদের প্রযোজনায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন “আষাঢ় কা এক দিন, কিসি এক ফুল কা নাম লো, এক ঔর দ্রোণাচার্য” নাটকে । ১৯৭২ সালে কলকাতাতে এসে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন অদাকার, পদাতিক, যবনিকার মতো নাট্যদলে । ১৯৭৬ সালে নিজেই তৈরি করেন তাঁর নিজের দল “রঙ্গকর্মী” । তাঁর হাত ধরে সত্তরের দশকে কলকাতায় হিন্দি নাটক জনপ্রিয়তা লাভ করে। কলকাতায় আসার পর হিন্দি বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। প্রথম দিকে শিক্ষকতা করলেও পরবর্তীকালে পুরোদস্তুর নাটকে মন দেন। প্রথমদিকে ‘রঙ্গকর্মী’র থিয়েটার পরিচালনার ভার তুলে দিতেন অন্য পরিচালকদের হাতে। তাঁর দলে নাট্য পরিচালনা করেছেন এম কে আনভাসে, তৃপ্তি মিত্রর মতো পরিচালকরা। পরবর্তীকালে তৃপ্তি মিত্র এবং মৃণাল সেনের তত্ত্বাবধানে ঊষা নিজেই শুরু করেন নাটক পরিচালনা। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে ‘কাশীনামা’, ‘রুদালি’, ‘কোর্ট মার্শাল’, ‘মুক্তি’ ও ‘মহাভোজ’।
কর্মজীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন ঊষা। পরিচালনার জন্য সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার। ‘গুড়িয়া ঘর’ নাটকের জন্য পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার।
হিন্দি সাহিত্য নিয়ে তাঁর পড়াশোনার কথা সর্বজনবিদিত। মাস্টার ডিগ্রি করেন হিন্দি সাহিত্যেই ৷ পরে ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেনয়৷ শিক্ষকতার ফাঁকে তাঁর নাটকের দল তৈরি করেন উষা। ৷ কলকাতায় হিন্দি নাটকের ক্ষেত্রে নতুন এক ধারা প্রবর্তন করেছিলেন তিনি৷ রঙ্গকর্মী গ্রুপ থিয়েটারে তাঁর পরিচালনায় ‘মহাভোজ’, ‘রুদালি’, ‘কোর্ট মার্শাল’ এবং ‘অন্তর্যাত্রা’র মতো নাটকগুলো প্রশংসিত হয়েছিল৷ ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘রেনকোট’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনাকার ও সহকারী পরিচালক ছিলেন উষা গাঙ্গুলী।
২০০৮ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছিলেনন তিনি ৷