ক্রিকেটের ময়দানে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA Vs BAN)। মার্কিন ক্রিকেটের জন্য যা ঐতিহাসিক, বাংলাদেশের জন্য তা রীতমতো লজ্জার। নিজেদের ঐতিহাসিক প্রথম সিরিজেই টানা ২টি জয়ে ইতিহাস গড়েছে জন্মসূত্রে অন্য দেশের এক ঝাঁক ক্রিকেটার নিয়ে গড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আইসিসির সহযোগী দেশটি এই প্রথম কোনো টেস্ট প্লেয়িং দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতল, তাও এক ম্যাচ হাতে রেখেই। টেক্সাসে হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে ৩ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয়ের পর অনেকেই এটিকে চমক বা অঘটন বলে উল্লেখ করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ রানের জয়ের নায়ক আলী খান (২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা) দৃপ্ত কণ্ঠ, ‘এখন আর অঘটন বলবেন না প্লিজ!’ বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষকে দেখে নেওয়ার হুঙ্কার ছুড়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ডানহাতি এই পেসার।
সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে ১৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে একসময় ৫ উইকেট হাতে রেখে ২৪ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৬ রান। ১৮ বলে ২৬ রান নিয়ে ক্রিজে সাকিব আল হাসান, অন্যপ্রান্তে জাকের আলী। ডেথ ওভারে ত্রাস হয়ে উঠলেন আলী খান। ৩ বল আগেই ১৩৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ! আইপিএলে ডাক পেয়ে, সিপিএল খেলে ইতিমধ্যে তারকাখ্যাতি পেয়ে যাওয়া পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার শেষ ওভারে ৫ রান দিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রিশাদ হোসেনকে। তানজিম হাসান সাকিবকেও করেছেন এলবিডব্লিউ। তার আগে বোল্ড করেন সাকিব আল হাসানকে।
আলী খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। ক্রিকেটে হাতেখড়ি সেখানেই। পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোয় পাকিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্ন থমকে যায়। ক্রিকেট সংস্কৃতিতে অনেক পিছিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও ২২ গজেই পড়ে থাকে আলী খানের মন। অপেশাদার ক্রিকেট চালিয়ে যান। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ওয়ানডে লিগের আসরে অভিষেক। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান। তবে জায়গা হয়নি চূড়ান্ত দলে। ওই বছরই প্রথমবার ডাক পান সিপিএলে। গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের হয়ে জেতেন শিরোপা। ২০১৮ সাল থেকে নাইট রাইডার্সের মালিকানাধীন দল ত্রিনবাগোতে খেলেন আলী খান। সেই সূত্রেই এর পর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাক পান আইপিএলে, যদিও কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে ম্যাচ খেলা হয়নি। খেলেন পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)।
পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী ফাস্ট বোলার আলী খান শেষ দুই ওভারে তিনটি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ছয় রানে হারিয়ে আইসিসির পূর্ণ-সময়ের সদস্য দেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় নথিভুক্ত করল। সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে পাঁচ উইকেটের জয় তুলে নেওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী মার্কিন ক্রিকেটাররা দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়লাভ করে এবং তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে থাকল। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের প্রস্তুতির জন্য এই সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। খান শেষ দুই ওভারে তিনটি উইকেট নেন এবং জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২৫ রান করেন এবং তিনটি উইকেট নেন।
প্রথমে ব্যাট করতে নামার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুর্দান্ত শুরু করে। স্টিভেন টেলর ২৮ বলে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন এবং অধিনায়ক মনাঙ্ক প্যাটেল ৩৮ বলে ৪২ রান করেন। আমেরিকা ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৪৪ করে। জবাবে বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। ইনিংসের চতুর্থ বলে সৌরভ নেত্রবালকর সৌম্য সরকারকে আউট করেন। তিনি তিন ওভারে ১৫ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন। নয় ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ তিন উইকেটে ৭৮ রান করে, খান একটি দুর্দান্ত স্পেল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জয়ের দিকে নিয়ে যান। বাংলাদেশকে ছয় রানে হারিয়ে আইসিসির পূর্ণ-সময়ের সদস্য দেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় নথিভুক্ত করে আমেরিকা।