নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসতঃ দেগঙ্গায় আমফান ঝড়ে দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ এবং “খাদ্যের ” এবং “দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ” জন্য আন্দোলনকারীদের মিলল জামিন। সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুর সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ১৫জনের প্রত্যেককেই অবশেষে রবিবার জামিন দিল বারাসাত আদালত। বেলবন্ডে যথাক্রমে দুহাজার ও দেড়হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্ত হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আগামী ৭জুলাই অবধি জামিনে মুক্ত হয়েছেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের জামিন মিলতেই শুরু হয় জয়োল্লাস। তাঁরা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসতেই তাঁদের কে গ্রামবাসী এবং আন্দোলনে শরীক মানুষেরা কার্যত বিজয়ী হিসেবে বরণ করে নিলেন। জুবি সাহা ও উদ্যম দাসকে যেন বিজয়মাল্য দিলেন আন্দোলনের শরীকরা আবিরে রাঙিয়ে। বারাসাত আদালত চত্বরের সামনে রবিবার বিকেলে চলল রঙের উৎসব। আকাশে উড়তে থাকে লাল আবির।
আমফান সুপার সাইক্লোন এসে আঁছড়ে পড়ার পরে দুর্গত মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল ঝড় বিধ্বস্ত অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে নিরন্তর। এরই মধ্যে দেগঙ্গার বিক্ষোভ সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা দেয় আম্ফানের ক্ষতিপূরণ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে। ক্ষতিগ্রস্থদের হয়ে আন্দোলনে নামতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রী ও “বুদ্ধিজীবী”দের।আর দেগঙ্গার ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে বিক্ষোভ হিংসাশ্রয়ী করে তোলার অভিযোগ ওঠে ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে। বহিরাগত তকমা জোটে তাঁদের। সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুর সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রুজু করা হয় ও পনেরোজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের গ্রেপ্তার করে বারাসাত আদালতে আনা হয়। রবিবারের আগে শুক্রবার উদ্যম দাস ও জুবি সাহাকে দুদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । বাকী ১৩ জনকেই পাঠানো হয়েছিল জেল হেফাজতে।রবিবার অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল জবাব করতে এবং শুনানীতে অংশ নিতে বারাসাত আদালতে আসেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্য। রবিবার দ্বিতীয়ার্ধে বারাসাত আদালতে ১৫ জনের জামিনের নির্দেশ মিলতেই আদালত চত্বর সংলগ্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের জয়োল্লাস ও আবীরের উৎসব একাকার হয়ে যায় । উদ্যম দাস ও জুবি সাহাকে আলিঙ্গন বদ্ধ করে আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ওঠে স্লোগান। দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সম্পর্কে এরপরই সরব হন জামিনে মুক্ত আন্দোলনকারীরা ।মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, সাংসদ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বললেও সাধারণ মানুষের সক্রিয়তা ছাড়া তা সম্ভব নয় দাবী করেন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ জুবি সাহা। একইসঙ্গে এভাবে বলপূর্বক মানুষের অভাব অভিযোগের জন্য আন্দোলন প্রশমিত করার চেষ্টা হলে আন্দোলন হবে তীব্র, দাবী জুবি সাহার। তাঁর আরো দাবী তাঁরা বহিরাগত নন, বহিরাগত ছিলেন সেখানে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করতে জমায়েত হওয়া দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের সেফগার্ড করতে আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের বহিরাগত তকমা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে, অভিযোগ জুবি সাহার। আন্দোলনের অপর উল্লেখযোগ্য মুখ উদ্যম দাস অবশ্য জানিয়েছেন তাঁদের তরফে খুব সামান্য হলেও হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন হয়েছে। “আমাদের দিক থেকে কয়েকজন ইঁট মেরেছে “উক্তি উদ্যমের।
আমফানে ক্ষতিগ্রস্থরা এদিনের আদালতের নির্দেশকে তাঁদের জয় মনে করে সন্তুষ্ট। তাঁরা জানিয়েছেন তাঁদের জন্য যাঁরা আন্দোলন করেছেন তাঁদের মুক্তিতে তাঁরা খুশী। আগামীদিনেও আন্দোলনকারীরা তাঁদের সঙ্গে থাকুন তেমনটাই তাঁরা চান।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্য এদিন অভিযুক্তদের হয়ে লড়ে আদালতের বাইরে এসে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন বিচারক ভাবভঙ্গি দেখে তাঁর মনে হয়েছে যে বিচারক মনে করছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান জানান, পুলিশি রাষ্ট্র তৈরী করার পরিকল্পনা আছে রাজ্যে এবং “খাদ্যের দাবীতে “দু চারটে ঢিল ছোড়া মোটেই অশান্তিপূর্ণ আন্দোলন নয় এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার গণতন্ত্রবিরোধী।
রবিবার বিকেলে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবি মিহির দে জানান, বিচারক মনে করেছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত ধারা,এফ আই আর ও ঘটনার রিপোর্ট একটির সঙ্গে আরেকটির সাযুজ্য নেই। তাছাড়া আগের শুনানীতে সরকারী সম্পত্তির ক্ষতির মত কিছু ঘটে থাকতে পারে সম্ভবনা আছে মনে করা হলেও ক্ষতির প্রমান মেলে নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জামিন দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসের সাত তারিখ আবার অভিযুক্তদের বারাসাত আদালতে হাজিরা দিতে হবে।।