এবারের ইউরোর (Euro Cup) গ্রুপ পর্বের অন্যতম হাইভোল্টেজ ম্যাচ হয়ে গেলো শনিবার ভোরবেলা। লাইপজিগের রেড বুল অ্যারেনায় আসরের অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছিল শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস। দুই দলের বর্তমান শক্তিমত্তার বিচারে প্রকৃতপক্ষে এগিয়ে ছিল ফ্রান্সই। মাঠের খেলায়ও স্পষ্ট ছিল সেই ছাপ। তবে, গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে দলের সবচেয়ে তুখোড় স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপকে ছাড়াই নামতে হয়েছে ফান্সকে। সুযোগটাও ভালোভাবেই লুফে নিয়েছে কমলা শিবির। এমবাপ্পের অনুপস্থিতি আর ডিফেন্ডারদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট বের করে নিয়ে গেছে রোনাল্ড কোম্যানের বাহিনী। পাশাপাশি গ্রুপপর্ব পার হওয়ার জন্য অনেকটা নিরাপদ পয়েন্টও সংগ্রহ করে ফেলেছে তারা।
এমবাপের অভাবটা পুরো ম্যাচেই ভুগিয়েছে ফ্রান্সকে। ৬৩ শতাংশ বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের গোলবারের দিকে ১৫টি শট নিলেও মাত্র তিনটি বল গেছে লক্ষ্য বরাবর; এর মধ্যে আবার মাত্র দুটি ছিল বড় সুযোগ, যেগুলো দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়েছেন ডাচ গোলরক্ষক ভারব্রুগেন।
ম্যাচের শুরুর সুযোগটি অবশ্য পায় নেদারল্যান্ডসই। প্রথম মিনিটেই ফ্রিমপংয়ের করা শটটা আলতো ছোঁয়ায় বাইরে পাঠিয়ে দেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক মাইক মাইগনান। এর তিন মিনিট বাদেই নেদারল্যান্ডসের গোলমুখে শট শানান ফ্রেঞ্চ অধিনায়ক আঁতোয়ান গ্রিজমান। কিন্তু দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ভারব্রুগেন। দশ মিনিট বাদেই আবারও দুই সুযোগ আসে গ্রিজমানের সামনে। কিন্তু থুরামের কাছ থেকে বক্সের মধ্যে পাওয়া সহজ বলটা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ব্যর্থ হলেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড বাদেই কান্তের কাছ থেকে পেয়ে যান আরও এক দারুণ পাস। এবারও বলটাকে গোলপোস্টের বাঁ দিক দিয়ে বাইরে পাঠালেন গ্রিজমান। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে তিনটা সহজ সুযোগ মিস। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ম্যাচে এমবাপ্পের নাকে পাওয়া চোটটা হয়তো তখন জ্বালা ধরাচ্ছিল দিদিয়ের দেশমের বুকে। এর কিছুক্ষণ বাদেই ১৭তম মিনিটে ফ্রেঞ্চ রক্ষণে দারুণ এক আক্রমণ নেদারল্যান্ডসের। বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সের কোণায় ঢুকে ডান পায়ে দারুণ এক বাঁকানো শট নেন গাকপো। বলটা প্রতিপক্ষের গোলবারের ডান দিকটার নিচের কোণাটা দিয়ে ঢুকতেই যাবে; তখনই মাইগনানের হাত। ক্লাসিক এই সেইভে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো ফ্রেঞ্চ শিবিরে। এরপর আবারো বল দখলে রেখে আক্রমণ গোছানোর চেষ্টা ফ্রান্সের। কিন্তু এমবাপের মতো তেড়েফুড়ে দৌঁড়ে যে ডাচ রক্ষণভাগ এলোমেলো করে দেবে সেরকম কেউ তো নেই আর। মাঝে গোলের সম্ভাবনা বলতে ২৮ তম মিনিটে থুরামের এক লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। পুরো প্রথমার্ধে ৫৮ শতাংশ বল দখলে রেখেও গোল মিসের মহড়ায় শূন্য হাতেই মাঠ ছাড়তে হয় গ্রিজমান, ডেম্বেলে, থুরামদের। বরং ১৭ তম মিনিটে মাইগনানের ওই দারুণ সেইভটা না হলে লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করতে পারতো কোম্যানের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধে যেন আরও গোছালো ফ্রান্স। বল দখলে আরও মনযোগী, কিন্তু তৈরি করতে পারছিলো না কোনো ভালো সুযোগ; আর ফিনিশিং তো যাচ্ছেতাই। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম সুযোগটা আসে থুরামের কাছে, ৬০তম মিনিটে। কিন্তু রেবিওটের কাছ থেকে পাওয়া বলটা এবারও কাজে লাগাতে ব্যর্থ লিলিয়ান থুরামের উত্তরসূরী। তিন মিনিট বাদে ডাচ গোলমুখের কাছে আরেকটি সুযোগ মিস করেন শুয়ামেনি। দুই মিনিট বাদেই ফ্রান্সের হয়ে আরেকটি অপূর্ব সুযোগ পান গ্রিজমান। কিন্তু গোলমুখের খুব কাছ থেকে নেওয়া তার নিচু শটটা দারুণ দক্ষতায় বাঁ পায়ে আটকে দেন ভারব্রুগেন।
ম্যাচের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তটি এসে হাজির হয় ৬৯তম মিনিটে। ফ্রেঞ্চ ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে পাওয়া একটি বলে জোরালো এক নিচু শট করেন ডাচ মিডফিল্ডার জাভি সিমন্স। মাইগনান পরাস্তও হন তাতে; ডান কোণা দিয়ে বল ঢুকে যায় ফ্রান্সের জালে। পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়ে ডাচ সমর্থকদের জয়োধ্বনিতে। আর মাঠে সিমন্সকে ঘিরে বাঁধভাঙা উল্লাস ডাচ খেলোয়াড়দের। কিন্তু সব থেমে যায় সাইডলাইন থেকে রেফারির অফসাইডের পতাকা তোলাতে। ভিএআর দেখে বোঝা যায়, সিমন্স যখন শটটা নেন মাইগনানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডামফ্রিজ। আর তাই বলটা সেইভ করার জন্য ডাইভ দেওয়ার সুযোগ পাননি মাইগনান। এরপর বাকি ২০ মিনিটে বলার মতো আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো পক্ষই। উল্টো শেষের দিকে লক্ষ্য করা যায়, যেন ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেই খুশি দুদল। হয়তো আগ্রাসী খেলতে গিয়ে শেষ মূহুর্তে কোনো প্রতি আক্রমণে গোল খাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলো না কেউই। ফলে আসরের ২১তম ম্যাচে এসে প্রথম শূন্য-শূন্য (০-০) স্কোর দেখলো এবারের ইউরো।
অবশ্য ম্যাচের এই ফলাফলে লাভবান হয়েছে দুদলই। দুই ম্যাচ শেষে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ডি-এর প্রথম স্থানে অবস্থান করছে নেদারল্যান্ডস। আর সমান ম্যাচে একই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফ্রান্স। গ্রুপপর্বে চার পয়েন্ট অর্জন করার পর বাদ পড়ার নজির নেই ইউরোর ইতিহাসে।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফেভারিট ফ্রান্সের সামনে দুর্বল পোল্যান্ড। ফলে ম্যাচটা অনায়াসেই জেতার কথা তাদের। এমনকি ড্র হলেও সমস্যা নেই তেমন। আর শেষ ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে সামনে পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। তাদেরও অনেকটা স্বস্তিতেই থাকার কথা। কারণ, ম্যাচটা ড্র করতে পারলেই শেষ ষোলোর টিকিট কাটা নিশ্চিত হয়ে যাবে ডাচদের।