ফরাসি রেফারি ক্লেমঁ তুরপিন শেষ বাঁশি বাজাতেই স্লোভাকিয়ার খেলোয়াড়দের আর থামায় কে! যিনি যাঁকে সামনে পাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরে উল্লাসে মেতেছেন। কেউ নিজেদের মতো করে নাচছেন, কেউ আবার গ্যালারিতে থাকা সমর্থকদের দিকে ছুটছেন। স্লোভেনিয়ানদের এই আনন্দ শুধু শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে রুখে দেওয়ার কারণে নয়; বরং তার চেয়েও বড়। কোলনের রাইনএনার্গি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে প্রথমবারের মতো ইউরোর (Euro Cup) শেষ ষোলো পর্বে উঠে গেছে স্লোভেনিয়া।
ইয়ান ওবলাক-বেনইয়ামিন সেসকোরা গ্রুপ পর্বে তৃতীয় হওয়া শীর্ষ চার দলের একটি হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। বড় কোনো টুর্নামেন্টে স্লোভেনিয়া এবারই প্রথম খেলতে যাচ্ছে নকআউট পর্বে। আগেই শেষ ষোলো পর্বে খেলা নিশ্চিত করা ইংল্যান্ড ম্যাচটি ড্র করলেও ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে।
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় গ্রুপের অন্য দুই দল ডেনমার্ক–সার্বিয়ার ম্যাচটিও গোলশূন্য ড্র হয়েছে। শেষ ষোলোয় উঠতে হলে জয়ের বিকল্প ছিল না সার্বিয়ার। কিন্তু পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হওয়ায় গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়তে হলো মিত্রোভিচ-ভ্লাহোভিচদের। আর এরিকসেন-স্মাইকেলদের ডেনমার্ক গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে উঠে গেল নকআউট পর্বে। গ্রুপে সব মিলিয়ে ৬টি ম্যাচ হলেও একটিমাত্র জয়ের দেখা পেয়েছে ইংল্যান্ড। বাকি ৫ ম্যাচ হয়েছে ড্র।
ডেনমার্ক ও স্লোভেনিয়ার অবস্থান নির্ধারণ হয়েছে অদ্ভুত এক নিয়মে। দল দুটি নিজেদের ম্যাচ থেকে অর্জিত পয়েন্ট, গোল ব্যবধান, গোল করা, শৃঙ্খলা (লাল ও হলুদ কার্ড)—সব কিছুর নিরিখেই ছিল সমান সমান। তবে ইউরোর বাছাই পর্বে ডেনমার্ক ছিল এগিয়ে। দুই দল বাছাইয়েও খেলেছিল একই গ্রুপ ‘এইচে’। সেখানে ডেনমার্ক হয়েছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর স্লোভেনিয়া হয়েছিল রানার্সআপ। নিয়ম অনুযায়ী, মূল পর্বে তাই ডেনমার্ককে গ্রুপের দ্বিতীয় ও স্লোভেনিয়াকে তৃতীয় সেরা দল বিবেচনা করা হয়েছে।
শেষ ষোলোতেই অবশ্য কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হচ্ছে ডেনমার্ককে। আগামী ২৯ জুন কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ড্যানিশদের প্রতিপক্ষ যে স্বাগতিক জার্মানি! ইংল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার প্রতিপক্ষ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
কোল পালমার, কোবি মাইনু, অ্যান্থনি গর্ডনদের মতো পরীক্ষিত তরুণদের আগের দুই ম্যাচে শুরুর একাদশে না রাখায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। ধারণা করা হয়েছিল, আজ হয়তো তাঁদের শুরু থেকে খেলাবেন। কিন্তু আজও পালমার, মাইনু, গর্ডনদের বসিয়ে রেখে পুরোনো কৌশলে খেলিয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা জুড বেলিংহামের পারফরম্যন্সও ছিল গড়পড়তা। ম্যাচে ৬৯টি পাস দিয়েও গোলের কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি বেলিংহাম। উল্টো বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন ১৬বার। সাউথগেটের ইংল্যান্ডের কাছ থেকে তাই আরেকটি ‘বোরিং ফুটবল’ উপহার পেয়েছেন সমর্থকেরা। ম্যাচে সব মিলিয়ে ৭৪% বলের দখল আর ১২টি শট নিয়েও গোলের দেখা পায়নি থ্রি লায়ন্সরা।