বাংলার প্রসিদ্ধ রথযাত্রা (Rath Yatra 2024) গুলোর মধ্যে অন্যতম হুগলির বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। সারা বছর জগন্নাথ দেব বৃন্দাবন জিউ মন্দিরে থাকেন। রথযাত্রায় মাসির বাড়ি যান।বেলা বারোটায় হবে রথের প্রথম টান। জানা যায় ১৭৪০ সালে এই রথ উৎসব শুরু করেন মধূসুদানন্দ মতান্তরে পিতাম্বরানন্দ।গুপ্তিপাড়ার রথ বৃন্দাবন জিউ রথ।
২৮৫ বছরে পড়ল গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা (Rath Yatra 2024)। বছরের অন্যসময়ে ঐতিহ্যপূর্ণ বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের পাশে বছরভর এই রথ টিনের খাঁচায় ভরা থাকে। এই রথ চার তলা, উচ্চতা প্রায় ৩৬ ফুট, দৈর্ঘ্য ও প্রস্ত ৩৪ ফুট করে। আগে বারোটা চূড়া ছিল বর্তমানে নয়টি চূড়া। বৃন্দাবন মন্দির থেকে জগন্নাথ,বলরাম আর সুভদ্রা রথে চড়ে যান প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোসাঁইগঞ্জ-বড়বাজারে মাসির বাড়ি।
পুরীর রথের সঙ্গে গুপ্তিপাড়ার রথের পার্থক্য হল, পুরীর রথকে জগন্নাথ দেবের রথ বলে। আর গুপ্তিপাড়ার রথকে বলে বৃন্দাবন জীউর রথ। গুপ্তিপাড়ার রথের বৈশিষ্ট্য হল, উল্টো রথের দিন এখানে ভান্ডার লুট হয়। যা সমগ্র ভারতবর্ষের আর কোথাও এই ভান্ডার লুট হয়না।
অন্য জায়গায় মতন এই দিন জগন্নাথ দেব তার মাসির বাড়িতে সকল মানুষের অন্তরালে বন্ধ ঘরে থাকেন। এই দিন জগন্নাথ দেবকে অনবদ্য নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। জগন্নাথের মাসির বাড়িতে ৫২টি লোভনীয় পদে প্রায় ৪০ কুইন্টাল খাবারের ‘ভাণ্ডার লুট পালন হয়। মেনে এখনও প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়ির মন্দিরের তিনটি দরজা একসঙ্গে খেলা হয়। ঘরের ভিতর রকমারি খাবারের পদ মালসায় করে সাজানো থাকে। দরজা খেলার পর এই প্রসাদ নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এই মালসা ভোগ পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত করে কয়েক হাজার মানুষ উল্টোরথের আগের দিন প্রসাদ পাওয়ার জন্য গুপ্তিপাড়া হাজির হন।
রথের মেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়িতে প্রভুর জন্য সাজানো ছিল নানা সুস্বাদু ব্যঞ্জন। প্রভু ঘরের দরজা খুলে দিতেই বৃন্দাবনচন্দ্রের লেঠেলরা সেখানে ঢুকে পড়ে সমস্ত লুঠ করে নেয়। প্রভুর জন্য ভাল খাবার আর কিছুই থাকে না। পরের দিন ভক্তদের কাঁধে চেপে আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।’’ তবে প্রথা চালুর কারণ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও গল্প আর সংস্কারে মিলেমিশে এই প্রথা বজায় আছে আজও।
শ্রীরামপুরের মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরে সকাল থেকে পুজোপাঠ হয়। বিকেলে শুরু হয় রথযাত্রা। গুপ্তিপাড়ায় রথের রশিতে প্রথম টান পড়ে বেলা বারোটায়।