দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় হল দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি শিক্ষার্থীদের মনুস্মৃতি (Manusmriti Controversy) পড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগেশ সিং স্পষ্ট করেছেন যে মনুস্মৃতি (Manusmriti Controversy) পাঠ্যাংশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পড়ুয়াদের এটা পড়তে হবে না।
তবে, ভাইস চ্যান্সেলরের দ্বারা এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার সময়, খবরটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক-অধ্যাপক সংগঠন সহ দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই ইস্যুতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারকে নিশানা করেছে। কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে অভিযোগ করে যে, এই সমস্ত ঘটনা সংবিধান এবং বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের উত্তরাধিকারের উপর আক্রমণ। এভাবেই বিতর্ক শুরু হয়।
কীভাবে শুরু হল বিতর্ক?
বৃহস্পতিবার জানা গেছে যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি শিক্ষার্থীদের মনুস্মৃতি (Manusmriti Controversy) পড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) একাডেমিক কাউন্সিলের একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে যেখানে এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আইন অনুষদ প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মনুস্মৃতি পড়ানোর জন্য পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে চায়। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
আইনশাস্ত্র বিষয়ের পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন এলএলবি-র প্রথম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সিলেবাসে দুটি বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝা রচিত মেধাতিতির মনুভাশ্য সহ মনুস্মৃতি এবং টি. কৃষ্ণস্বামী আইয়ার রচিত অন্য মনুস্মৃতি-স্মৃতিচন্দ্রিকার টীকা। ২৪শে জুন, অনুষদের ডিন অঞ্জু ওয়ালি টিক্কুর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পরিবর্তনটি অনুমোদিত হয়।
মনুস্মৃতি বিতর্ক নিয়ে উপাচার্য কী বলেছিলেন?
একই সময়ে, যখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনুস্মৃতি (Manusmriti Controversy) পড়ানোর প্রস্তুতির তথ্য সামনে আসে, তখন সমালোচনা শুরু হয়। তাড়াহুড়ো করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগেশ সিং বেরিয়ে এসে পুরো বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ফ্যাকাল্টি মাধ্যমে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবে তারা আইনশাস্ত্রের বিষয়ে পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।” উপাচার্য আরও বেলন, “পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি ছিল মনুস্মৃতির (Manusmriti Controversy) অন্তর্ভুক্তি। আমরা বই অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এবং ফ্যাকাল্টির মাধ্যমে পরিবর্তন উভয়ই প্রত্যাখ্যান করেছি। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কোনও বিষয় ছাত্রদের পাড়ানো হবে না।”
সরকারের সমালোচনায় কংগ্রেস
মনুস্মৃতি (Manusmriti Controversy) পড়ানোর প্রস্তুতিরও সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। পার্টির তরফে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও নিশানা কড়া হয়। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “এইসব সংবিধান এবং ডঃ আম্বেদকরের উত্তরাধিকারকে আক্রমণ করার জন্য আরএসএস-এর দশক-পুরনো প্রচেষ্টাকে পরিণতি দেওয়ার জন্য অ-জৈবিক প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের অংশ এটি।”
জয়রাম দাবি করেন যে, ১৯৪৯ সালের ৩০শে নভেম্বর প্রকাশিত আরএসএস-এর মুখপত্র অর্গানাইজার লিখেছিল যে, ভারতের নতুন সংবিধান সম্পর্কে সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল যে এতে ভারতীয় কিছুই নেই। সংবিধানের প্রণেতারা ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান, সুইস এবং অন্যান্য অনেক সংবিধানের উপাদানগুলিকে এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কিন্তু এতে প্রাচীন ভারতীয় আইন/স্মৃতির কোনও চিহ্ন নেই। আমাদের সংবিধানে প্রাচীন ভারতের অনন্য সাংবিধানিক বিকাশের কোনও উল্লেখ নেই।