এটি একটি ছোট সুন্দর দ্বীপ (Saint Martin Island) । এটি তার আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। স্বচ্ছ নীল জল এবং প্রবালের মতো সামুদ্রিক প্রাণের প্রাচুর্য এখানকার মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই দ্বীপটিও একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
সহিংসতার মধ্যে দেশ ছাড়ার পর এবারই প্রথম বিবৃতি দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তার বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন (Saint Martin Island) দ্বীপের সার্বভৌমত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করলে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারতেন।
ইকোনমিক টাইমস শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, “যদি আমি সেন্ট মার্টিন (Saint Martin Island) দ্বীপের ওপর আমার সার্বভৌমত্ব ছেড়ে দিতাম এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বঙ্গোপসাগরের এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে দিতাম। তাই আমি ক্ষমতায় থাকতে পারি।” শেখ হাসিনার উল্লেখিত দ্বীপটি কোথায় অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরে এর গুরুত্ব কতটুকু তা জানার চেষ্টা করা যাক।
কত বড় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ?
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ(Saint Martin Island), যা নারিকেল জিঞ্জিরা (নারকেল দ্বীপ) বা দারুচিনি দ্বীপ (দারুচিনি দ্বীপ) নামেও পরিচিত। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাত্র ৩ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্রে বিস্তৃত একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। এই দ্বীপটি কক্সবাজার-তাঙ্কাফ উপদ্বীপ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। যেখানে এটি মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
এটি একটি খুব সুন্দর ছোট দ্বীপ (Saint Martin Island)। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং এটি তার আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। স্বচ্ছ নীল জল এবং প্রবালের মতো সামুদ্রিক প্রাণের প্রাচুর্য এখানকার মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই দ্বীপটিও একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। বিশেষ করে শীতকালে এখানকার আবহাওয়া খুব সুন্দর হয়ে ওঠে। দ্বীপের চারপাশের অর্থনীতি নির্ভর করে মূলত মাছ ধরা, ধান-নারকেল চাষ এবং পর্যটনের ওপর। ছোট এই দ্বীপে প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ
তবে সুন্দর এই দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ চলছে। সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধের কারণে সার্বভৌমত্বের দাবি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এই এলাকা ঘিরে মাছ ধরার অধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ২০১২ সালে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অফ দ্য সি (ITLOS) রায় দেয় যে দ্বীপটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমুদ্র, মহাদেশীয় শেলফ এবং EEZ এর অংশ।
২০১৮ সালে, বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের একটি আপডেট করা মানচিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল যেখানে দ্বীপটিকে তার সার্বভৌম ভূখণ্ডের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছিল। যদিও পরে মিয়ানমার এই ‘ভুল’ মেনে নেয়।
কেন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
শেখ হাসিনার এই অভিযোগ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের কৌশলকে সামনে নিয়ে আসে। চীন তার তথাকথিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অংশ হিসাবে একাধিক সামরিক ঘাঁটি এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্য করিডোর তৈরি করে ভারতের অগ্রগতি বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্যোগে চীনের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যেটিকে ভারত তার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মনে করে। কারণ এই প্রকল্পটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) মধ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি আমেরিকাকে সতর্ক করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রস্তুত করেছে, যেখানে ভারত একটি প্রধান কৌশলগত অংশীদার। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিক্রিয়ায় উভয় দেশই QUAD (চতুর্পক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ) এবং মালাবার নৌ মহড়ার মতো অন্যান্য প্রক্রিয়া তৈরি করেছে।