বলিউড, বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, দীর্ঘকাল ধরে ভারতের বৈচিত্র্যময় গল্প এবং সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করার একটি আয়না। আর সেখানেই, সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে, মূলধারার সিনেমায় হিন্দুফোবিয়ার (Bollywoods Hinduphobia) একটি ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে ,যা নিঃসন্দেহে হিন্দু সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, যেভাবে তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে সিনেমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।হিন্দু চরিত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিহ্ন এমনকি প্রথাগুলিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনা করা যেন বলিউডে এক নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এবং তা থেকেই একটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে বলিউড হিন্দু বিরোধী ভাবাবেগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ এবং সাম্প্রতিক উদাহরণ
হিন্দু সংস্কৃতিকে অপমানজনকভাবে দেখানো বলিউডে নতুন কিছু নয়,তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং আকারে এবং বহরে বেড়েছে। পিকে (২০১৪) এবং ওহ মাই গড (২০১২) সিনেমাগুলি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কারণ হিন্দু ধর্মীয় বিধি আচার-আচরণ নিয়ে সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। যেখানে অন্য ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। সেজন্যই এই দ্বিচারিতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ।
সাম্প্রতিক ছবি ‘আইসি ৮১৪’ এবং ‘দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক’ যা 1 সালে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাইয়ের নাটকীয়তা তৈরি করে, এই বিতর্কিত প্রবণতার সর্বশেষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।যা ১৯৯৯ সালের সেই কুখ্যাত ভারতীয় বিমান অপহরণের ঘটনার উপর নির্মিত। এই সিনেমায় যেভাবে জঙ্গিদের দেখানো হয়েছে তা নিয়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু জঙ্গিদের হিন্দু নামও দেওয়া হয়েছে। এবং সেজন্যই এই সিনেমাটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিতর্কিত সিনেমা আইসি ৮১৪
বাস্তব জীবনে আইসি ৮১৪ বিমানের অপহরণকারীরা ইসলামি সন্ত্রাসবাদী ছিল। তা সত্ত্বেও সিনেমায় তাদের হিন্দু নাম দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টিকে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে ও হিন্দু সমাজকে অপমান করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আলোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে শুধু ইতিহাসকেই বদলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তা নয়,ইতিহাসকেই বদলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তা নয়, একইসঙ্গে হিন্দুদের বদনাম করার এ এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র।
আইসি ৮১৪ বিমানের গল্পে জঙ্গিদের হিন্দু নাম দেওয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটা যেন বলিউডের এক ধারা হয়ে গিয়েছে। যেখানে হিন্দু রীতিগুলির চিহ্ন ও ব্যক্তিত্বদের বেশিরভাগ সময়ই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই ট্রেন্ড অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং সমাজে নিঃসন্দেহে বিরূপ ধারণার জন্ম দেয়।
যদিও সম্প্রতি নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ ভারত সরকারের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। তবে এটা কি যথেষ্ট? উঠছে প্রশ্ন ।
সিনেমায় হিন্দুফোবিয়ার বিস্তৃত তাৎপর্য
ধারাবাহিকভাবে বলিউড মুভিতে হিন্দুদের খলনায়ক হিসাবে তুলে ধরার সামাজিক স্তরে প্রভাব ও তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু সমাজে নিঃসন্দেহে এই ধারণার বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটা মনে হতে বাধ্য যে হিন্দু ধর্মকে অযাচিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে বিভেদমূলক মনোভাবের বিস্তার ঘটবে, অথচ এই হিন্দু ধর্ম যুগে যুগে সবসময়ই ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ তৈরি করেছে গোটা বিশ্বের কাছে।
বলিউডের নির্বাচনী লক্ষ্যবস্তু হল হিন্দু ঐতিহ্য। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা পদ্মাবতও একই কারণে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল। সেখানে হিন্দু রাজপুতযোদ্ধাদের নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করা এবং নেতিবাচক চরিত্রকে বড় করে বীরত্বের সঙ্গে দেখিয়ে আদতে হিন্দু বীরদের সাহস ও বীরত্বকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। একইভাবে ২০১৮ সালেই তৈরি স্যাক্রেড গেমস ওয়েব সিরিজে যেভাবে ত্রিশূল ও শ্রীমদ্ভগবত গীতাকে বিভিন্ন দৃশ্যে উপস্থাপিত করা হয়েছিল তা নিয়ে অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। ফলে বেছে বেছে হিন্দু সমাজ ও ধর্মকে নানাভাবে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে বলিউডে একটি প্যাটার্ন তৈরি করা হয়েছে। যা কখনই কাম্য নয় এবং সৃষ্টির স্বাধীনতার ফাঁক গলে যাতে কোনও জাতি বা ধর্মকে আঘাত না করা হয়, সেই বিষয়টিতে নিশ্চিত করার আশু প্রয়োজন যা সমস্ত সম্প্রদায়ের সংবেদনশীলতাকে সম্মান করে।
দ্য বটমলাইন: ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজন
বলিউডের হিন্দু চরিত্রগুলিকে চিত্রায়নের ক্ষেত্রে আরও সাবধানী হওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে শিল্পকে বাস্তব রূপ দিলে সমালোচনার জায়গা তৈরি হয় না। আইসি ৮১৪, দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক-এর মতো সিনেমা বা অন্য সিনেমাগুলিতে যেভাবে হিন্দুদের টার্গেট করা হয়েছে, তাতে সামাজিক ঐক্য কোথাও গিয়ে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বলিউড যদি ভারতের বিভিন্নতাকে সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে চায় তাহলে উচিত সমস্ত ধর্ম ও সম্প্রদায়কে সম্মানের সঙ্গে পর্দায় উপস্থাপন করা। কারণ আমজনতার মনে এই সিনেমা জগতের বিরাট প্রভাব রয়েছে। ফলে এমন একটি দায়িত্বশীল জগত কখনও নিরপেক্ষতার সঙ্গে আপোষ করতে পারে না বা করা উচিত নয়, যাতে অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ এবং সমস্ত ধর্মের প্রতি সম্মান বজায় থাকে। ফলে সামাজিক বিভাজনও রক্ষা হয়।
নিম্নলিখিত টুইটে বলিউডের অনেকের মধ্যে কয়েকটি সিনেমার তালিকাও রয়েছে, যেগুলি এখন কয়েক দশক ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দুদের অবজ্ঞা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
#Bollywood has changed identify or deliberately denigrated Hindus for decades. Here are 10 cases! You will find the same hateful bigots if you check their producers, directors, story writers…
1/10 pic.twitter.com/2bdBksQqA7
— Eminent Intellectual (@total_woke_) September 1, 2024
এটি একটি নিছক কাকতালীয় এবং সৃজনশীল স্বাধীনতা নাকি ইচ্ছাকৃত চক্রান্ত কিনা তা আমরা আপনার উপর ছেড়ে দিই।