Homeরাজ্যের খবরBanedi Barir Durga Puja: ১৫৫ বছরের পুরনো কাঠামোয় আজও ব্রিটিশরূপী অসুরকে...

Banedi Barir Durga Puja: ১৫৫ বছরের পুরনো কাঠামোয় আজও ব্রিটিশরূপী অসুরকে বধ করেন দুর্গা! কোন নিয়মে হয় এই বাড়ির পুজো?

Published on

পুজোর বাকি হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। বাইরে আকাশের মুখ ভার। নাছোড়বান্দা বৃষ্টি যেন পিছু ছাড়তেই চাইছে না। বাঙালি সারা বছর অপেক্ষায় থাকে পুজোর পাঁচটা দিনের জন্যে। কারণ সুখ, দুঃখ, আনন্দ সবই জড়িয়ে আছে এই উৎসবের সঙ্গে। বৃষ্টির মতিগতি দেখে যা মনে হচ্ছে, তাতে পুজোতে জল ঢালতে পারে। বৃষ্টিতে কাদা মাখামাখি করে থিমের পুজো দেখতে না-পারলে তাই ঢুঁ মারতে পারেন বনেদি বাড়ির (Banedi Barir Durga Puja) পুজোগুলোতে।

 শহর কলকাতার অনেক পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির ছোঁয়া। কোনওটার সঙ্গে আবার স্বদেশি আন্দোলনের ইতিহাস। উত্তরে রয়েছে যেমন শোভাবাজার রাজবাড়ি। মধ্য কলকাতার জানবাজারে রানি রাসমণি দেবীর বাড়ির পুজো। দক্ষিণে ঠিক তেমনি ভবানীপুরের দে বাড়ি (Banedi Barir Durga Puja)। এই সব পুজোয় রয়েছে কোনও না কোনও গল্প। যেমন দক্ষিণ কলকাতার দে বাড়ির পুজো। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে স্বদেশি আন্দোলনের চিহ্ন। যা এখনও স্পষ্ট। ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডের দে বাড়ির পুজোতে ব্রিটিশরূপী অসুরকে দমন করেন দুর্গা! পরনে কোট-প্যান্ট। মুখের গড়ন ইংরেজদের মত। অসুরের মাথার চুলও সাহেবদের মতই ধবধবে সাদা।

জানলে অবাক হবেন, ভবানীপুরের দে বাড়ির পুজো (Banedi Barir Durga Puja) প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত এই একই নিয়মে হয়ে আসছে। সালটা ১৮৭০। ভবানীপুর দে পরিবারের পুজোর সূচনা করেছিলেন রামলাল দে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে, গোবরডাঙ্গায়। পরবর্তীকালে ব্যবসায়িক সূত্রে তিনি দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পারিবারিক তুলোর ব্যবসার তখন রমরমা অবস্থা। সেই ব্যবসা বংশপরম্পরায় আজও রয়েছে। পরিবারের ষষ্ঠ প্রজন্ম দেবরাজ দে। বাড়ির পুজোর ইতিহাস নিয়ে গল্প করার সময় তিনি বলছিলেন, ‘পুজোর শুরু হয়েছিল দেবীর মাতৃরূপী আগমনের মাধ্যমে।

একদিন সন্ধ্যায় এক লালপাড় সাদা শাড়ি পরিহিত মহিলা তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করেন এই ২৬নং চন্দ্রনাথ স্ট্রিট-এর বাড়িতে। তিনি গৃহকর্তার কাছে কিছু চাল ভিক্ষা চান। গৃহকর্তা যখন ভাঁড়ার ঘর থেকে চাল আনতে যান, তিনি তার সন্তানদের নিয়ে কাউকে কিছু না-বলেই গৃহের দালান থেকে ভিতর মহলে চলে আসেন। বাড়ির এক সদস্যা তৎক্ষণাৎ তাঁর পিছু নেওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী মুহূর্তে ওই মহিলা ও তাঁর সন্তানদের বাড়ির কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু দিন পরে সেই একই বেশে সেই মহিলাকে আবারও দেখা যায় বাড়ির ছাদের কার্নিশে বসে পা দোলাতে। ইতিমধ্যে শ্রী রামলাল দে-ও সেই একই বেশ ধারণকারী মহিলার স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে তাঁকে ওই মহিলা বলেন, দেবী দুর্গার পূজা করতে। সেই বছর অর্থাৎ ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেবী দুর্গাকে মাতৃরূপে পুজো শুরু করেছিলেন শ্রী রামলাল দে।

বৃষ্টির জন্যে দে বাড়ির ঠাকুরদালান স্যঁতস্যাঁতে। পুরোনো আলপনার রং উঠে গিয়েছে। মায়ের ঠাকুরদালান সেজে উঠতে এখনও কয়েকদিন বাকি। না সেজেও যেন লালপাড় সাদা শাড়িতে দেবী এখানে অপরূপ সুন্দরী। ঠাকুর দালানে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। বর্তমানে দেবীর পুজোর আরাধনা করেন রামলাল দে-এর তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে অতুলকৃষ্ণ দে ও অনুকূলকৃষ্ণ দে-এর বংশধরেরা।

বংশপরম্পরায় প্রতিবছর রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনার সূচনা করা হয় এই বাড়িতে। একচালার সাবেকি প্রতিমা পূজিতা হন একই কাঠামোয়। অর্থাৎ দেবীর বিসর্জনের পর কাঠামো ফিরিয়ে আনা হয়। পরের বছর সেই পুরোনো কাঠামোতেই দেবী দুর্গাকে প্রতিষ্ঠা করা হয় যা এইবার ১৫৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। প্রতিমা তৈরির সব কাজ করা হয় বাড়ির ঠাকুর দালানেই। এই বাড়ির পুজোর আরেকটি বিশেষত্ব হল দেবীর বাহন রূপে থাকা সিংহের গায়ের সাদা রং। দেবী যে ঘরে পূজিতা হন, সেই ঘরে পুরোনো দিনের মাটির মেঝে এখনও অপরিবর্তিত। কুমোরের মূর্তি নির্মাণের পর, পরিবারের সদস্যরা নিজে হাতেই দেবীকে সাজিয়ে তোলেন।

চতুর্থীর দিন পরিবারের মহিলারা দেবীর জন্য নারকেল নাড়ু তৈরি করেন। সিঁদুর দিয়ে রাঙানো অস্ত্র দেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বোধনের প্রাক্কালে। নিত্যভোগ রূপে ১৩ টি লুচি ও ১৩ রকমের মিষ্টি দেবীকে অর্পণ করা হয়।

অষ্টমী তিথিতে কুমারী ও সধবা পুজোর সঙ্গে এই বাড়ির মহিলা সদস্যরা মাথায় ও দুই হাতে সরা নিয়ে ধুনো পোড়ান। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে ৪৮ মিনিটের সন্ধি পুজোতে ফল ও ২১ কিলো চাল দিয়ে নির্মিত নৈবেদ্য দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তার সঙ্গে দেওয়া হয় ১০৮ প্রদীপ ও ১০৮ পদ্মের মালা। বিজয়া দশমীর দিন জল-আয়নায় দেবীর চরণ দর্শন, দেবীকে বরণ ও সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়। পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও প্রতিমা বাঁশে বেঁধে, কাঁধে করেই হেঁটে গঙ্গায় নিরঞ্জন করা হয়। পুজোর পাঁচদিন উমার আরও এক বাপের বাড়ি, ভবানীপুর দে বাড়ি যেন সেজে ওঠে তাদের ঐতিহ্যের রঙে। এই পুজোর মূল আকর্ষণ ব্রিটিশরূপী অসুরকে দমন করেন দুর্গা।

কেন ব্রিটিশরূপে অসুরকে তৈরি করা হয়েছিল?

দে পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোটা যখন শুরু হয়েছিল তখন ভারতবর্ষ পরাধীন। ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারে জর্জরিত। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছিল ইংরেজদের তুমুল অত্যাচার ও অপশাসন। ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছিল স্বদেশি আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকারের অরাজকতা ও ভারতীয়দের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অষ্টাদশ শতক থেকে মহিষাসুরকে ব্রিটিশ সাহেবের রূপ দান করা হয়। কালো কোট ও বুট পরা গোরা সাহেব এখানে থাকেন দেবী দুর্গার পায়ের তলায়। দেবী দুর্গা ত্রিশূল দিয়ে সাহেবরূপী অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী মূর্তির সেই রূপ এই পুজোয় আজও অপরিবর্তিত। দেবী দুর্গা বিসর্জনের পর দে বাড়িতে বিজয়া দশমী পালন করা হয়। পরিবারের কচিকাঁচা থেকে বড় সকল সদস্যেরাই ওইদিনের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন। নাচ, গান, আবৃতি যে যাতে পারদর্শী তাই পরিবেশন করেন বিজয়া সম্মেলনি অনুষ্ঠানে।

Latest News

IND vs AUS: ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস, অজিদের কোমর ভেঙে দিলেন অধিনায়ক বুমরা

শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার (IND vs AUS) মধ্যে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট...

IPL: আইপিএলের আগামী তিন আসরের সূচি প্রকাশ্যে

আসন্ন আইপিএলের (IPL) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি এখনও। আগামী ২৪ ও ২৫ মে সৌদি আরবের...

Gyanvapi case: জ্ঞানবাপি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়, মুসলিম পক্ষকে নোটিশ, ১৪ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত?

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জ্ঞানবাপি মসজিদ (Gyanvapi case) পরিচালনা কমিটি এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে...

TMC Leaders: শুদ্ধিকরণের পথে দল! গ্রেফতার তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতা

মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বৃহস্পতিবার বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন (TMC Leaders)। এরপরেই তড়িঘড়ি  বারাবনির এসআই-কে...

More like this

TMC Leaders: শুদ্ধিকরণের পথে দল! গ্রেফতার তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতা

মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বৃহস্পতিবার বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন (TMC Leaders)। এরপরেই তড়িঘড়ি  বারাবনির এসআই-কে...

Calcutta High Court: আপাতত ভাঙা যাবে না মন্দারমনির হোটল! বড় সিদ্ধান্ত কলকাতা হাইকোর্টের

হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে সাময়িক স্বস্তিতে  মন্দারমনির হোটেল মালিকরা। জেলা শাসকের হোটেল ভাঙার...

Kinjal Nanda: বিজ্ঞাপনী প্রচারে কিঞ্জল নন্দ! আরজি কর কাণ্ডের আগে কোথায় ছিলেন… কটাক্ষ নেটিজেনদের

আরজি কর কাণ্ডে ১০০ দিন কেটে গিয়েছে। (Kinjal Nanda) সুবিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসক থেকে...