শুক্লা রায়চৌধুরী,কলকাতাঃ দীর্ঘ ৯ দিনের লড়াইয়ের কাছে হার মানলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।সাথে অবসান হল রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের। বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি বেলভিউ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৭৮।
দীর্ঘদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন সোমেনবাবু। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় সম্প্রতি তাঁর ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি ধরা পড়ে। সেজন্য গত ২১ জুলাই তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। কিডনির সমস্যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছিল। তবে তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছিল। ডায়ালিসিসের পর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। পেসমেকারের বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু তারইমধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতরাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাত দেড়টা নাগাদ সোমেনবাবুর মৃত্যু হয়েছে। ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘তিনি ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এবং অন্যান্য বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।’
অধুনা বাংলাদেশের যশোহর জেলায় ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সোমেনবাবু। ষাট এবং সত্তরের দশকে প্রভাবশালী এবং আগুনে রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর উত্থান। ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে ষাটের দশকের শেষভাগে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। ১৯৭২ সালে শিয়ালদহ বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই আসন থেকে সাতবার জিতেছিলেন। গনি খান চৌধুরীর শিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
রাজনীতির ‘ছোড়দা’ সোমেনবাবু তিনবারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। প্রথম দফায় ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল, দ্বিতীয় দফায় ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষপদে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফের তাঁকে রাজ্যে কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
যদিও তারমধ্যে একাধিক ঘটনার সাক্ষী থাকে রাজনৈতিক মহল। ঘোর দুর্দিনেও কংগ্রেসে থাকা সোমেনবাবু ২০০৮ সালে দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তৈরি করেছিলেন নিজের দল ‘প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস’। পরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সেই দল মিশিয়ে দিয়েছিলেন এবং ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। ঘাসফুল টিকিটে দাঁড়িয়ে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে জয়লাভও করেছিলেন। হারিয়েছিলেন সিপিআইএম সাংসদ শমীক লাহিড়িকে। কিন্তু ২০১৪ সালে তৃণমূল ছেড়ে আবারও নিজের ঘরে ফিরে এসেছিলেন তিনি। তারপর থেকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কংগ্রেসেই ছিলেন। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট তৈরির অন্যতম স্থপতিকার ছিলেন তিনি। সেই মাপের এক নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলের শোকের ছায়া নেমে এসেছে।সোমেন বাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে টুইট করে শোকজ্ঞাপন করেন রাহুল গান্ধী ।
All my love and support to family and friends of Somen Mitra at this difficult time. We will remember him with love, fondness and respect. pic.twitter.com/k1muPvycgT
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) July 30, 2020