শীতকালে গঙ্গাসাগর (Gangasagar) যাত্রার প্রস্তুতির সময় বাবুঘাট পরিণত হয়েছে এক অনন্য দৃশ্যে। সারি সারি তাঁবুতে (Gangasagar) ভরে গেছে গঙ্গার তীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা এখানে এসে জমায়েত করেছেন (Gangasagar) । কেউ গেরুয়া বসনে, কেউ অঘোরী সন্ন্যাসী হিসেবে কালো পোশাকে, আবার কেউ একেবারে বস্ত্রহীন—এ যেন এক ভিন্ন জগতের প্রতিচ্ছবি (Gangasagar) ।
শহুরে কোলাহল ও রোজনামচা থেকে মুক্তি খুঁজতে সাধুদের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা নিজেদের সমস্যা থেকে মুক্তির আশায় সাধুদের আশীর্বাদ চাইছেন। নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ায় দেখা মিলছে বিরল দৃশ্যের—সারা গায়ে ছাই মাখা নিরাভরণ সাধুরা ধুনির আগুন জ্বালিয়ে ধ্যানে বসেছেন।
এক ভক্ত বলেন, “সাধু বাবার ছোঁয়ায় যেন মনে শান্তি ফিরে পাই। এত ব্যস্ত জীবনে কিছুটা স্বস্তি খুঁজতেই এখানে আসা।” আরেক ভক্তকে দেখা গেল, ধুনির ছাই কপালে মেখে প্রণাম করছেন। এই সাধুদের কেউ এসেছেন প্রয়াগরাজ থেকে, কেউ গুজরাট বা নয়ডা থেকে। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প আলাদা, তবে লক্ষ্য এক—পরমাত্মার সন্ধান। কেউ ধ্যানে বসেছেন, কেউ তন্ত্রসাধনা করছেন। ভক্তদের বিশ্বাস, তাঁদের আশীর্বাদে দূর হবে জীবনের বাধা-বিপত্তি।
গঙ্গার পাশেই তৈরি হয়েছে প্রায় ১০০টি আখড়া। প্রতিটি আখড়ায় চলছে তৎপরতা। সমীরনাথ অঘোরী, এক প্রবীণ সাধু, তাঁর আখড়ায় তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি জানান, “আমাদের আখড়ায় লুচি, আলুর দম আর সুজি রান্না করে অন্যান্য সাধুদের পরিবেশন করা হচ্ছে। এটা আমাদের সেবা।”এই জমায়েতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য রাজ্য সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সাধু-সন্ন্যাসীদের থাকা ও খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাবুঘাটে এই জমায়েত সাময়িক। সাধুরা কিছুদিন থেকে কেউ গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা হবেন, আবার কেউ কুম্ভ মেলার দিকে পা বাড়াবেন। পূর্বাশ্রমের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, তাঁরা এক অনন্য সাধনায় নিমগ্ন। গঙ্গা, যিনি বহু জীবনের সাক্ষী, সেই নদীর তীরেই বসেছে সাধুদের এই আখড়া। শহরের ব্যস্ত জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে বাবুঘাট যেন এক অনন্ত শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।