নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুরঃ অবশেষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সঞ্জিত ওরফে পাপ্পু সিং বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে এসে একরকম আত্মসমর্পণ করলেন।
বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের গোয়েন্দারা দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পর ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়ার অভিযোগে পাপ্পু সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে ওই নেতার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বারাকপুরের পুলিস কমিশনার। এদিন সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেন বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের গোয়েন্দারা।
বারাকপুরের পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের তছরুপের ঘটনায় অন্তত চারবার ৪১এ ধারায় ওই বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে কমিশনারেটে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু ওই নেতা আসেননি। সেই কারণে বলা হয়েছিল, এবার আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এনে বাড়িতে থেকে তুলে আনা হবে। তারপরই এ দিন পাপ্পু সিং কমিশনারেটে আসেন।
পুলিস ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে ব্যাঙ্কের তৎকালীন এক শীর্ষকর্তা ছাড়াও পাপ্পু সিংয়ের আপ্তসহায়কও রয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা হেফাজতে। তদন্তকারীদের কথায়, ধৃতদের জেরা করে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি সংক্রান্ত অনেক তথ্যই মিলেছে। যার উপর নির্ভর করে এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান কমিশনার।
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন পাপ্পু সিংয়ের কাকা অর্জুন সিং। তৃণমূলে থাকাকালীন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং ভাটপাড়া পুরসভার প্রধানও ছিলেন। সেই সময় পুরসভার কাজের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ওই সমবায় ব্যাঙ্কের বহু কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে তছরুপ হয়। মোট ২৬টি ফাইলে সই হওয়ার পর ঋণ অনুমোদন হয়েছিল। যার পরিমাণ আগে পুলিস ২০ কোটি টাকার কথা বললেও পরে তা দেখা যাচ্ছে ১১-১২ কোটি টাকার বেশি নয়।
কমিশনার বলেন, ‘পুরসভার কাজের জন্য এই ঋণ দেওয়া হলেও আমরা তদন্তে নেমে দেখেছি প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকা ঘুরে পাপ্পু সিংয়ের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।’ সেখান থেকে তা অন্য জায়গায় বণ্টন করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের কোনও পদে না থাকলেও সহজেই এই টাকাগুলি ওই নেতার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। সেকারণেই পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করার জন্য একাধিকবাব সাংসদের বাড়ি ‘মজদুর ভবন’-এ গিয়েছিল পুলিস। কিন্তু প্রতিবারই বাধা পায়। কমিশনারের কথায়, ২০১৮ সালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হলেও পরে ভয়ে ঋণগ্রহীতারা টাকা দিতে শুরু করেন। কিন্তু যা হয়েছে তা তো প্রতারণাই। সেকারণেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতি, প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পাপ্পু সিংয়ের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের তরফে বৈঠক ডেকে অর্জুন সিংকেও চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে।