নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা: শরণার্থীদের পুণর্বাসন দেওয়া নিয়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশের গুলি চালানোয় প্রাণ গেল এক যুবকের। সেই সঙ্গে জখম হয়েছেন আরও নয় জন। নিহত এবং আহত সকলেই বাঙালি। ঘটনাটি বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার।
ঘটনার সূত্রপাত ওই রাজ্যে ব্রু-রিয়াং শরণার্থীদের পুণর্বাসন দেওয়া নিয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ত্রিপুরা রাজ্যে তাঁদের পাকাপাকিভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে কেন্দ্র যার ফলে নয়া চুক্তি অনুসারে তারা ত্রিপুরার ভোটার হয়ে গিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ আর্থিক প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে কাঞ্চনপুরের বাঙালিরা। শুরু হয়েছে আন্দোলন।
কাঞ্চনপুরের বাঙালিরা নিজেদের চার দফা দাবি নিয়ে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় শনিবার অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ উঠেছে যে ওই নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চালায় পুলিশ। এমনই জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতা অনুপ নাথ। তাঁর কথায়, “চার দফা দাবি পূরণের দাবিতে গত সোমবার থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমা বনধ চলছে। আমাদের কোনও দাবি প্রশাসনিক কর্তারা মানেননি। সেই কারণে আজ আমরা রাস্তা অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন আমাদের উপর পুলিশ গুলি চালায়।”
একই সঙ্গে অনুপবাবু আরও বলেছেন, “অনেক শিশু এবং মহিলা ছিলেন। সেসব কিছু না দেখেই গুলি চালিয়ে দেয় পুলিশ। একজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। আরও একজনের পায়ে গুলি লেগেছে। ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ৯ জন জখম হয়েছেন।”
পুলিশ বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনুপ নাথ। পুলিশের গুলিতে মৃত ওই ব্যক্তির নাম শ্রীকান্ত দাস। জখম অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন অনুপবাবু।
ব্রু-রিয়াং উপজাতির লোকেরা মিজোরাম থেকে ত্রিপুরায় এসে বসবাস শুরু করেছিল ১৯৯৭ সালে। মিজোরামে গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে ওই উপজাতির প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ মিজোরাম ত্যাগ করে এবং ত্রিপুরায় এসে বসবাস করতে থাকে। অভিযোগ, গত ২৩ বছর ধরে বাঙালিদের উপরে চরম অত্যাচার চালিয়েছে মিজোরাম থেকে আসা রিয়াং উপজাতির লোকেরা। বহু বাঙালিকে হত্যা করেছে, তাদের জন্যেই অনেক বাঙালি ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছেন। নিজভূমেই পরবাসী হতে হয়েছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরের ৫০০ বাঙালি পরিবারকে।
সেই উপজাতির মানুষদেরকেই ফের পুণর্বাসন দেওয়া হচ্ছে ত্রিপুরাতেই। যার কারণে আবারও সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন কাঞ্চনপুরের বাঙালিরা। যা নিয়েই শুরু হয়েছিল আন্দোলন। এখন চলছে অনশন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, “কাঞ্চনপুরের বহু বাঙালিকে অপহরণ করে হত্যা করেছে রিয়াং-রা। অনেকেই নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাঁদেরকেই আবার এখানে সরকার থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে পাকাপাকিভাবে। এতেই আমাদের আশঙ্কা বাড়ছে।”
বাঙালিদের পাশাপাশি বেশ কিছু মিজো পরিবারও এই আন্দোলনে সামিল রয়েছেন। তাঁদের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, “রিয়াং উপজাতিরা ত্রিপুরাতে থাকতে পারেন। তবে কাঞ্চনপুর মহকুমা থেকে তাদের সরানো হোক। অনেক অত্যাচার করেছে। এখানেই পাকাপাকিভাবে ওরা থাকতে শুরু করলে বাঙালির আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।”