খবরএইসময়, নিউজ ডেস্কঃ “বেতার সম্প্রচার এক জাতির সঙ্গে আর এক জাতির সম্পর্ক তৈরীতে এবং মানবজাতির একাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে” বিশ্বাস করতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার কর্তৃক অল ইন্ডিয়া রেডিওর সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়। এই আকাশবাণীর নামকরণ করেছিলেন বিশ্বকবি । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বহু ইতিহাস বহু আত্মবলিদানের অজানা তথ্য স্বাধীনতার নিজস্ব সম্পত্তি। এই অজানা তথ্য সম্প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট ভারত সরকারের কাছে অনেক আবেদনের পর কলকাতায় সর্বপ্রথম টেলিভিশন চালু হয়। বহু পুরোনো এই দুই মাধ্যম ছিল দেশ-বিদেশের নানারকম খবরাখবর জানার বিশেষ মাধ্যম। এক সময় ‘সংবাদপত্র’ই ছিল গণযোগাযোগের মাধ্যম।
এরপর এল এক বিপ্লব।বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির ফলে সংবাদপত্র, টিভি, রেডিওর পাশাপাশি সাইবারনেটিকস গড়ে তুলেছে মানব ইতিহাসের বৃহত্তম গণযোগাযোগ মাধ্যম। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এখন পরস্পর সংযুক্ত। কেবল কথা বলা নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে নতুন ‘সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম’। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আর কেবল ‘প্রিন্ট মিডিয়া’ বা কাগজে ছাপা সংবাদপত্রই গণযোগাযোগের মাধ্যম নয়। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এমনকি কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহৃত হাতের সেলফোনটিও এখন গণযোগাযোগের মাধ্যম। এরপর ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জন্ম হল “ডিজিটাল মিডিয়ার”। সরাসরি ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুরু হল সাংবাদিকতা।
বহু সংবাদপত্র ও টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল গুলির সর্বদ্রুত ও নতুন রূপ প্রকাশ পেল ডিজিটাল মিডিয়ায় মাধ্যমে, যা খুব সহজেই সকলের কাছে কম সময়ে সবার আগে পরিবেশিত হয়। এত উন্নত প্রযুক্তি আসার পরও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরকার স্বীকৃত, যার ফলে গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র। কিন্তু ডিজিটাল মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বড় প্রশ্ন চিহ্ন। তাহলে যাঁরা ডিজিটাল মিডিয়া কর্মী তাদের কি কোনো দাম নেই? ডিজিটাল মিডিয়ার অংশ বিভিন্ন পোর্টাল গুলির সংবাদ প্রেরণের বা প্রকাশের ওপর কোনো আস্থা নেই? পোর্টালের সাংবাদিকরা কি তাহলে সাংবাদিক নয়? এমনই বহু প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করায় ডিজিটাল মিডিয়াকে। বলাবাহুল্য এক কথায় “হ্যাটা” করা হচ্ছিল পোর্টাল ও পোর্টালের সাংবাদিকদের,তথা ডিজিটাল মিডিয়াকে। কিন্তু এই হ্যাটা আর কতদিন চলতে পারে? তাই সরকার স্বীকৃতের জন্য সারাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে একই ছাদের নীচে আসার জন্য শুরু হয় আন্দোলন।
ইতিমধ্যে ৯ই নভেম্বর কেন্দ্র সরকার ডিজিটাল মিডিয়াকে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সমান গুরুত্ব দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার একটি নির্দেশ জারি করে ডিজিটাল বা অনলাইন মিডিয়া, চলচ্চিত্র এবং অডিও-ভিস্যুয়াল প্রোগ্রামকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে নিয়ে আসে যেখানে এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এখন থেকে সমস্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে। এই নির্দেশ জারি হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের সমস্ত জেলার সাংবাদিকরা যারা প্রায় দীর্ঘদিন ধরেই ডিজিটাল মাধ্যমের সাহাজ্যে নানা খবর পরিবেশন করছিলেন তারা সকলে একত্রিত হয়ে তৈরি করলেন এক নতুন সংগঠন। যার নাম দেওয়া হল “ডিজিট্যাল মিডিয়া এ্যাসোসিয়েশন”। বর্তমানে এখনও পর্যন্ত এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক।
সক্রিয় হয়ে আন্দোল চালানোর পর অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়। ডিজিট্যাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনই প্রথম সংগঠন যারা আমন্ত্রণ পেলেন স্বয়ং পিআইবি-র মত কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থার কাছ থেকে আলোচনার জন্য। গত ১৮ই নভেম্বর বুধবার কলকাতার পিআইবি অফিসে ডাক পড়ে ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির সদস্যদের। সদস্যরা কলকাতার পিআইবি অফিসে ডিজি রবীন্দ্রনাথ মিশ্রার সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি ডিজিটাল সংবাদকর্মীদের একাধিক দাবি সম্বলিত একটি সনদপত্র লিখিত আকারে ডিজির কাছে পেশ করেন।
পিআইবির পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি অরিন্দম রায় চৌধুরি, সম্পাদক সুব্রত রায়, সহ সভাপতি শুভ্রজিৎ দত্ত, সহ সম্পাদক দেবাশীষ সেনগুপ্ত, কোষাধ্যক্ষ মৌসুমি দেওয়ানজি। কার্যকরী সমিতির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রণব বিশ্বাস, সমিত সিনহা, বিশ্বজিৎ দেওয়ানজি এবং সুস্মিতা সাহা।