NISAR: পৃথিবী দেখবে NISAR, ইসরো-নাসার যুগান্তকারী মিশন

শ্রীহরিকোটা: ভারত আজ মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এবং মার্কিন মহাকাশ সংস্থা (NASA)-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত প্রথম পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ NISAR (NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar) আজ বুধবার বিকেল ৫.৪০ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই উচ্চাভিলাষী মিশনের জন্য ২৭.৩০ ঘণ্টার কাউন্টডাউন মঙ্গলবার দুপুর ২.১০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে।

NISAR: এক অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

NISAR মিশনটি শুধু ভারত বা নাসার জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞান সম্প্রদায়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি ইসরোর জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (GSLV-F16) রকেটের ১৮তম উড্ডয়ন এবং সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ১০২তম উৎক্ষেপণ। ২,৩৯২ কেজি ওজনের NISAR উপগ্রহটি সূর্য-সমকালীন মেরু কক্ষপথে স্থাপন করা হবে, যা এর পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বৈশ্বিক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও যুগান্তকারী প্রযুক্তি

পূর্বে ইসরো RESOURCESAT এবং RISAT-এর মতো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করলেও, সেগুলির তথ্য মূলত ভারতীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু NISAR-এর বিশেষত্ব হলো এটি প্রতি ১২ দিন অন্তর সমগ্র পৃথিবীর ভূমি এবং বরফের উপরিভাগ স্ক্যান করবে। এই উপগ্রহটি এক সেন্টিমিটার স্তর পর্যন্ত নির্ভুল ছবি তুলতে এবং প্রেরণ করতে সক্ষম, যা পৃথিবীর পরিবেশগত পরিবর্তনগুলির সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করবে।

NISAR-এ নাসার তৈরি এল-ব্যান্ড রাডার এবং ইসরোর তৈরি এস-ব্যান্ড রাডার স্থাপন করা হয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাডার প্রযুক্তি বলে বিবেচিত। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণে অভাবনীয় সহায়তা দেবে। এর ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা এবং প্রতিক্রিয়া আরও কার্যকর হবে।

বিজ্ঞান ও মানবজাতির কল্যাণে NISAR

NISAR মিশনটি জলবায়ু পরিবর্তন, হিমবাহের গতিবিধি, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন এবং কৃষি সংক্রান্ত গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের পরিবর্তনগুলি নিরীক্ষণে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে, যা ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে এবং মানবজাতিকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। এই যৌথ উদ্যোগ মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো, যা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে এক বিশাল পদক্ষেপ।