খবরএইসময়,নিউজ ডেস্কঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত অং সান সু কি-র সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করল মায়ানমার সেনা। ভোরের তল্লাশিতে ৭৫-এর সু কি-সহ ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)-র অন্য নেতাদের আটক করা হয়। ‘নির্বাচনে কারচুপি’র বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এক বছরের জন্য ইমার্জেন্সি জারি করে সেনাপ্রধান অং লাইং-এর হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বলে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে সেনার তরফে। ভোটার লিস্ট পরিমার্জনের দাবি, ভোট নিয়ে অখুশি নাগরিকদের অভিযোগ না শোনা এবং সংসদের অধিবেশন পিছোনোর আর্জিতে কর্ণপাত না করার জন্যই এই অভ্যুত্থান বলে বিবৃতিতে তাদের বক্তব্য।
সেনাপ্রধান অং লাইং ।
গত বছরের ৮ নভেম্বর বিপুল ভোটে জয়ী হয় সু কি-র এনএলডি। তারপরে এ দিন প্রথম সংসদ বসার কথা ছিল। তার আগেই অভিযান চালায় সেনা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই খাবারদাবার মজুত করতে এবং নগদ তুলে রাখতে স্থানীয় বাজার এবং এটিএমে ভিড় করেন বাসিন্দারা। গুরুত্বপূর্ণ শহরে বন্ধ করা হয় টেলিফোন সংযোগ এবং রুখে দেওয়া হয় স্টেট টেলিভিশনের সম্প্রচার। ব্যাহত হয় ইন্টারনেট সংযোগ।
যে সব জায়গায় এনএলডি শক্তিশালী, সেখানেও সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে এনএলডি-র মুখপাত্র মিও নিউন্ত জানিয়েছেন, সু কি ছাড়াও মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট-সহ কয়েকজনকে আটক করেছে সেনা। তিনিও আটক হতে পারেন, এই আশঙ্কা প্রকাশ করেও মিও বলেন, ‘আবেদন সমর্থকদের কাছে আবেদন, আইন মেনে চলুন। বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন না।’ এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
২০১১-য় মিলিটারি জুন্টা ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হওয়ার পর গত বছর ছিল দ্বিতীয় নির্বাচন। সেখানে ৮৩ শতাংশ ভোট পায় নোবেলজয়ী সু কি-র দল। তারপর থেকে টানাপোড়েন চললেও গত ক’দিনে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা ক্রমশ জোরালো হয়। নতুন সংসদের অধিবেশন বসার আগেই সংবিধান খারিজের প্রসঙ্গ তোলেন সেনাপ্রধান। অভ্যুত্থানের আশঙ্কাও তখন উড়িয়ে দেননি সেনার এক মুখপাত্র।
নেতাদের ধরপাকড় নিয়ে মুখ খুলেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেন এবং হোয়াইট হাউজ পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নেতাদের মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন। বিবৃতিতে মায়ানমারকে বর্মা হিসাবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন — গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের পথে বর্মার মানুষের সঙ্গে আছে আমেরিকা। সেনা এখনই তাদের পথ থেকে সরে আসুক।
সেনার আচরণের নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর।
মিলিটারি জুন্টার বিরুদ্দে গণতন্ত্রের দাবিতে তাঁর দীর্ঘ লড়াই সু কি-তে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি দেয়। কয়েক দশকের গৃহবন্দিত্বের পর ২০১৫-য় প্রথম নির্বাচনে জেতেন তিনি। ২০১৭-য় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর সু কি সরকারের ‘দমনপীড়নে’র খবরে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তাঁর ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলেও নিজের দেশে এখনও প্রবল জনপ্রিয় সু কি।
ইউকে’র প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করে জানান, আমি মায়ানমারের অং সান সু কি সহ অন্যান্য নেতাদের বেআইনী কারাদণ্ডের নিন্দা জানাই। জনগণের ভোটকে সম্মান করতে হবে এবং নেতাদের মুক্তি দিতে হবে।
I condemn the coup and unlawful imprisonment of civilians, including Aung San Suu Kyi, in Myanmar. The vote of the people must be respected and civilian leaders released.
— Boris Johnson (@BorisJohnson) February 1, 2021