তিমিরকান্তি পতি,বাঁকুড়া: ফের মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে স্থান পেল বাঁকুড়ার নাম। আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনিক কাজকর্মে সামিল হলেন এই জেলার সোনামুখীর সোহিনী চট্টোপাধ্যায়। তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্র দূতের নীতি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কালেও নীতি উপদেষ্টা (আন্তর্জাতিক উন্নয়ন) পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলানো এই বঙ্গ তনয়া অবশ্য মনে-প্রাণে আজও বাঙালি। প্রিয় খাদ্য বেগুন পোড়া। তাই মার্কিন মুলুক থেকে এ বাংলায় ফিরলে পাতে বেগুন পোড়া তাঁর চাই-ই চাই।
রুখা-শুখা লাল মাটির জেলা বাঁকুড়ার সঙ্গে সোহিনীর যোগের সূত্র খুঁজতে আমাদের একটু পিছনে তাকাতে হবে। ১৯৭৮ সালে স্ত্রী ও শিশুকন্যা সোহিনীকে নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন সোনামুখী শহরের মনোহরতলার বাসিন্দা স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলেন। পাশাপাশি বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে প্রশাসনিক স্তরেও। প্রবাসী ভারতীয় হিসেবে ইন্দো-আমেরিকা সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ সালে ভারত সরকার স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়কে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করে। মেয়ে সোহিনীও অত্যন্ত মেধাবী। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের পর জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যাডভান্স ইন্টারন্যাশান্যাল স্টাডিজ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্নাতকোত্তর পাঠের পাশাপাশি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়েও পড়াশুনা করেন। এমনকী কলেজে পড়াকালীন কলকাতায় এসে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’তে মাদার টেরেসার অধীনে কয়েক মাস দক্ষতার সঙ্গে কাজও করেন।
তবে ঘরের মেয়ে দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে স্থান পাওয়ায় খুশি বাঁকুড়াবাসী। কিন্তু শেষ কবে সোনামুখীর বাড়িতে এসেছিলেন সোহিনী? পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আটেক আগে এসেছিলেন লাল মাটির দেশে। তার পর আর জেলায় আসা হয়নি। অবশ্য বছর চারেক আগে কলকাতায় এসে ছোট পিসির বাড়ি বাঁশদ্রোণিতে ছিলেন।
সোহিনীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবারের লোকেরাও। তাঁর পিসি, সোনামুখী কলেজের অধ্যাপিকা ছায়া মুখোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ওর মন খুব স্পর্শকাতর। পরিবারের কারও অসুস্থতার খবর পেলে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। তবে এখন অনেক বড় দায়িত্ব। শুধু ঘরের মেয়ে বলে নয়, একজন বাঙালি হিসেবেও খুব আনন্দ হচ্ছে।’ আর বেগুন পোড়ার প্রতি সোহিনীর প্রীতির কথা জানালেন পিসি মণিকা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘মেয়েটা বেগুন পোড়া খেতে বড় ভালোবাসে। বাড়িতে এলে ওর জন্য বেগুন পোড়া চাই-ই চাই। বাংলা থেকে দূরে থাকলে ও বাঙালি। আমিই ভাইঝিকে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখিয়েছি। শাড়ি পরাও শিখেছে আমার কাছে।’
শুধু পরিবার নয়, সোহিনীর সাফল্যে গর্বিত সোনামুখীও। ঘরের মেয়ে ফিরলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত লাল মাটির মানুষরাও।