আবু আলী, ঢাকাঃ ‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র দেশভাগের পর থেকেই চলছি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা তাদের পরাজিত করে সেই ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছি। কিন্তু এখনও বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতির প্রতি পাকিস্তান ও তাদের অনুসারীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।’
গতকাল রবিবার রাজধানীতে ইআরএফ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ওপেন ডায়ালগ বাংলাদেশ’ র উদ্যোগে আয়োজিত ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা শীর্ষক’ এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল, ড. মুহাম্মদ আব্দুল হাই, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইমক্যাব) সভাপতি বাসুদেব ধর।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ৫২ তে উর্দুকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল এই বলে যে, উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা, ইসলাম ধর্মের ভাষা। বিষয়টি অসত্য। কিন্তু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেই কিন্তু প্রাদিশিক ভাষা উর্দু নয়। মুসলিম বিশ্বের আরবী মুসলিমদের ভাষা নয়। তুর্কি, পার্সি মুসলিমদের ভাষা নয়।
তিনি বলেন, পাকিস্তানীরা একটি সাম্প্রদিক চেতনা থেকে একটি ভাষার চরিত্র নির্ধারণ করেছিল। বলা হয়েছিল বাংলা ভাষা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা আর উর্দু হচ্ছে মুসলিমদের ভাষা। একটি অসত্য চিন্তা দিয়ে সাম্প্রদিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই ভাষাকে চিহিৃত করার চেষ্টা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালীকে যদি তাদের চিন্তার ভাষা থেকে সরিয়ে লক্ষ্য ছিল উৎস মূল।
সংস্কৃতিগত ও জাতীয়তাবাদী চেতনার জায়গা থেকে তুলে ফেলা এবং সাম্প্রদায়িক চরিত্র দিয়ে একটি ভিনদেশি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। তার পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, ভাষা শহিদদের উত্তসুরী হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি করতে হবে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্বাধীনতার ইতিহাস সিলেবাসে অন্তুভূক্ত করে আগামী প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে। তা না হলে আগামীতে পাকিস্তানের পাসপোর্টধারীদের সঙ্গে বসবাস করতে হবে।
সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এখনও পরাজিত শক্তি পাকিস্তান আচরণের পরিবর্তন হয়নি। তারা জঙ্গি ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, সুন্দর করে বাংলায় কথা বলা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। ভাষা দিবসে আমাদের সুন্দর ও শুদ্ধ করে বাংলা ভাষার চর্চার অঙ্গীকার করতে হবে।