প্রনব বিশ্বাস,ব্যারাকপুরঃ প্রতিবছর নির্ঘণ্ট মেনে এপ্রিল মাসে শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে একে একে খোলা হয় চারধামের কপাট (দরজা)। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী উপত্যকার দরজা খোলার মধ্যে দিয়ে প্রতিবছর শুরু হয় বার্ষিক চার ধাম যাত্রা। এবছরও সে প্রথার অন্যথা হল না।কিন্তু লকডাউন ও সংক্রমণ (Lockdown) শঙ্কায় তীর্থযাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্তব্ধ গোটা উত্তরাখণ্ড।শুধু মাত্র বাছাই করা কয়েকজন পুরোহিত আর মন্দির কমিটির কয়েকজনের উপস্থিতিতে পূজো পাঠের মধ্য দিয়ে গত রবিবারেই অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন খুলে গিয়েছে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীর কপাট(দরজা)।
অন্যদিকে, পঞ্চমুখী দেব বা বাবা কেদারনাথ (ভগবান শিব)-এর ডোলি নিয়ে রবিবারই উখি মঠের ওঙ্কারেশ্বর মন্দির থেকে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন পাঁচ সন্ন্যাসী। প্রতিবছর পঞ্চমুখী ডোলি যাত্রা শুরু হয় ২৭ এপ্রিল থেকে। প্রচুর ভক্ত, সন্ন্যাসী বয়ে নিয়ে যান সেই ডোলি। লকডাউনে এবার কেউ সেই যাত্রায় অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু দেবযাত্রা যাতে বন্ধ না থাকে তার জন্য পাঁচ সন্ন্যাসীই এবার কাঁধে তুলে নিয়েছেন পঞ্চমুখী দেব বা বাবা কেদারনাথের ডোলি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একটি ৪ চাকার মোটর গাড়িতে চেপে ডোলি নিয়ে গৌরিকুণ্ডে পৌঁছনোর পর সেখানে বিশ্রামের জায়গা বরফে ঢেকে থাকায়,পঞ্চমুখী (panchmukhi) দেবমূর্তি স্বস্থানে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বরফ কেটে পায়ে হেঁটেই রওনা দেন ওই পাঁচ সন্ন্যাসী।মাঝে রাতে খানিক্ষণ ভিমচোলিতে বিশ্রাম নেন সন্ন্যাসীরা।
তারপর ফের ভক্তিতে অবিচল সন্ন্যাসীরা তাঁদের আরাধ্য দেবতাকে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে মন্দির প্রাঙ্গনে পৌঁছোনোর লক্ষ্যে পদব্রজে যাত্রা শুরু করেন। পঞ্চমুখী দেবের ডোলি নিয়ে ১০ ফুট পুরু বরফে ঢাকা পাহাড়ি, দুর্গম পথ অতিক্রম করে অবশেষে বাবা কেদারভুমিতে বা কেদারনাথ মন্দিরে এসে পৌঁছন সন্ন্যাসীরা।
কেদারনাথ মন্দিরের পূজারী দুর্গেশ শুক্ল জানান, অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ ভোর ৬ টা নাগাদ ওই ৫ সন্ন্যাসীরা মন্দিরে এসে পৌঁছন। পঞ্চমুখী দেবের মূর্তি আসতেই মন্দিরে শুরু হয়ে যায় সাজসাজ রব। পঞ্চমুখী দেব বা বাবা কেদারনাথের মূর্তি রাখা হয় মন্দিরের ভিতরে কেদারলিঙ্গের উপর। আগামিকাল মহাসমারহে পূজোপাঠের পর ভক্তদের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হবে বাবা কেদারনাথের পুন্যদ্বার। পাশাপাশি বহু যুগ ধরে মেনে চলা রিতি অনুযায়ী পঞ্চমুখী দেব বা বাবা কেদারনাথের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা পান মন্দিরের প্রধান পুরহিতের আশ্রমে।
সংবাদমাধ্যমকে সৎপাল মহারাজ জানিয়েছেন, “লকডাউনের বাধা এড়িয়ে আমরা এগোচ্ছি ঈশ্বরের ওপর অটস ভক্তির জোরে। একই সঙ্গে বহু যুগ ধরে মেনে চলা ঐতিহ্য পালনে। আশা, প্রতিবছরের মতোই চার মন্দিরের সমস্ত দরজা খোলা হবে এই মহামারীর মধ্যেই।”
ছবি ও তথ্য- কেদারনাথ মন্দিরের পূজারী দুর্গেশ শুক্ল।