প্রণব বিশ্বাস, সোদপুর: মানুষ আজ বড় অসহায় আজ এই করোনা আবহে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি যেটা শিখিয়েছে সেটা হল, মানুষ কখনো একা বাঁচতে পারে না । এই মারণ রোগটা মানুষের ভেদাভেদ, হিংসা, দলাদলি সব যেন এক লহমায় ভেঙে দিল। প্রতিটি মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। এই রোগ থেকে নিরাপদে থাকার জন্য আমরা সবাই আজ গৃহবন্দী।
একসময় চিড়িয়াখানায় গিয়ে খাঁচায় বন্দী পশুপাখিদের দেখে আমরা আনন্দ নিয়েছি তখন তাদের কষ্ট তাদের একঘেয়েমি বোঝার চেষ্টা করিনি শুধু নিজের টুকু বুঝতাম। এখন আমরা বুঝতে পারি বন্দীদশার কষ্ট কতখানি। তবে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে শিশুদের মনে। ঘরের জানালাটা আজ তাদের কাছে আস্ত একটা দুনিয়া। মুক্ত আকাশে পাখিরা নিজের খেয়ালে উড়ে চলে যখন, তখন তারা জানালা দিয়ে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে কবে আমরা এই বন্দীদশা থেকে মুক্ত পাবো। তবে শুধু শিশু কেন এই গৃহবন্দী থেকে মুক্তি চাইছে সকলেই। আর সেই মুক্তি পেতে মানুষ আজ শরণাপন্ন দশভুজা দেবী দুর্গা’র।
সময় হয়েছে দেবী দুর্গার মর্তে আসার। মাঝে মাত্র আর কয়েকটা দিন। শরতের সুনির্মল আকাশে আজ আগমনী সুর। আজ পবিত্র রাখি বন্ধনের শুভক্ষণে মাতৃবন্দনায় মেতে উঠলেন সোদপুর এইচবি টাউন এলাকার বাসিন্দারা। মানুষের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে খুঁটি পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহনে সোদপুর ‘বিজয়নগর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।’ এদিন এই কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা কৌশিক সেনগুপ্ত জানান, এ বছর তাঁদের ৭২ তম বর্ষ। দেবী দুর্গার কাছে তাঁদের আকুল প্রার্থনা , মা দুর্গা যেন এই মহামারী করোনাভাইরাসকে বিনাশ করেন এবং সকল মানুষ যেন এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন।
উত্তর শহরতলীর মধ্যে সোদপুরের এই বিজয়নগর সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির পূজো একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। এখানকার পুজোয় থাকে বনেদিয়ানার ছাপ। সরকারি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে একটা সুন্দর সুস্থ পরিবেশ যেমন থাকে, সমগ্র এলাকা জুড়ে থাকে সি সি ক্যামেরার সুরক্ষাবলয়। সারা বছর ধরে যেমন নানান সামাজিক কাজকর্ম করে থাকেন এখানকার উদ্যোক্তারা, তেমনই বাদ যায়না বাঙ্গালীর এই শ্রেষ্ঠ পুজোতেও। পানিহাটি অঞ্চলের সহনাগরিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন হোমের আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের হাতেও নতুন জামাকাপড় তুলে দেন এই পুজোর উদ্যোক্তারা। পুজোয় এ বছরে কি থিম হবে ? জানতে চাওয়া হলে কৌশিক বাবু জানান, এ বছর তাদের পুজোর থিম “বন্দীদশা থেকে মুক্ত ।”