নিজস্ব প্রতিনিধি, জয়দেব: আজ মকর সংক্রান্তি। শুরু হল প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন জয়দেব-কেন্দুলির মেলা৷ প্রথা অনুযায়ী মকরসংক্রান্তির দিনে অজয় নদের তীরে পুণ্যস্নান সারছেন পুণ্যার্থীরা। তবে, করোনার প্রকোপে একেবারের ভির নেই মেলায়৷ বাউল-ফকির শূন্য মেলাই যায়৷ রাধাবিনোদের মন্দিরে পুজো দেওয়ার লাইন নেই৷ সব মিলিয়ে বেশ কিছুটা ম্লান জয়দেব মেলা।
১৬৮৩ সালে বর্ধমানের রাজা কীর্তিচন্দ্র বীরভূমের অজয় নদের তীরে রাধা-বিনোদের মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্থানটির সঙ্গে কবি জয়দেবের নাম জড়িয়ে আছে ৷ মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজের মাধ্যমে বর্ণিত আছে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ। ৪০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জয়দেব-কেন্দুলির মেলা ।
বীরভূম জেলার ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব পঞ্চায়েতে অজয় নদের পাড়ে জয়দেব-কেন্দুলি গ্রাম। এটিই কবি জয়দেব – এর জন্মস্থান। সংস্কৃতে ‘গীতগোবিন্দ’ রচনা করেই সমাদৃত হন। সেসময় মূলত তাঁর উদ্যোগেই জয়দেব-কেন্দুলি সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন ধর্মের আলোচনার পাশাপাশি এখানে তৈরি হয় একাধিক মঠ। বারো-তেরো শতকে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন কবি জয়দেব।
২০২১ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ ছিল এই মেলা। তবে মকরসংক্রান্তির দিন অজয় নদে পুণ্যস্নান সেরেছিলেন পুণ্যার্থীরা। এই বছর মেলা না হওয়ারই কথা ছিল৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক ছাড়পত্র মেলায় এই বছর মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বসেছে দোকান-পাট, গুটি কতক আখড়া।
সকাল থেকেই চলছে পুণ্যস্নান। তবে একেবারেই ভিড় নেই মেলায় ও স্নানের ঘাটে৷ প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে জয়দেব মেলায়৷ তিল ধারনের জায়গা থাকে না৷ করোনার প্রকোপে মেলার দৃশ্যটা সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ রাধাবিনোদের মন্দিরে পুজোর দীর্ঘ লাইন দেখা যেত, এবছর গুটি কতক ভক্ত এক এক করে গিয়ে পুজো দিচ্ছেন৷ সব মিলিয়ে ম্লান কবি জয়দেবের স্মৃতিবিজড়িত এই মেলা৷
তবে মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথারীতি আঁটোসাটো করা হয়েছে। প্রায় ২০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। নজরদারির জন্য রয়েছে ৭০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ৭ টি ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও চলছে নজরদারি। ইভটিজিং, কেপমারি রুখতে সাদা পোশাকের পুলিশও রয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। এছাড়া, স্নানের ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন রয়েছে, রয়েছে লাইফ বোর্ড৷
মেলায় আগত পুর্ণ্যার্থীদের মন খারাপ। তারা বলেন, “এমন মেলা আগে দেখিনি৷ এবার একেবারেই ভিড় নেই৷ অন্যান্য বার পা ফেলার জায়গা থাকে না৷ এবার কিছুই নেই মেলায়৷”
বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায় বলেন, “মেলায় লোকজন কম। তবে আমরা নিরাপত্তার দিকটা প্রতিবারের মতই রেখেছি। সিসিটিভি, ড্রোন, ওয়াচ টাওয়ার আছে। পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে।”