জয়রাজ পাল
ছোটবেলা থেকে আমি মূলত যাদের খেলা দেখে বড়ো হয়েছি তাঁদের মধ্যে অন্যতম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যে ভারতবর্ষের রঙিন-সাদাকালো উভয় মেরুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে সঞ্চার করেছিল খেলজগতের প্রতি দুরন্ত উচ্ছল নেশার ঘোরে জেঁকে বসা এক আবহমান ভালোবাসা, যে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে পূরণ করে এসেছিল ১৩১ কোটি ভারতবাসীর মনে খেলাধূলা নিয়ে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা হাজারো অপ্রত্যাশিত আশা, রোমাঞ্চ, উচ্ছাস। এমনকি অজস্র বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষক এই দেশের প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে নব উদ্যমে সৃষ্টি করেছিল ভালোবাসার নতুন এক ধর্ম… ক্রিকেট।
যার নিঃশব্দ সৃষ্টিনাশা ভেদ করে সমাজের প্রতিটা স্তরের, প্রতিটা ধর্মের মানুষ রোদে-বর্ষায়, প্রেমে-বিক্ষোভে, আলো-অন্ধকারে একসাথে বসে পড়ে টিভির সামনে কিংবা আপামর বিশ্বের সমানাধিকার ধারণ করা কোনো এক হেমন্তময় ক্রিকেটীয় অরণ্যে। শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কোণঠাসা কিছু মুহুর্তে লুকিয়ে থাকা সকল দ্বিমূল তত্ত্বের মনোভাবকে পেরিয়ে যার ছত্রছায়ায় এসে সাত থেকে সাতাশি প্রত্যেকের সন্মিলিত কন্ঠস্বরে প্রকাশ পায় ভালোবাসার সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর শব্দ… ইন্ডিয়া… ইন্ডিয়া…। আর এই মহান প্রতিভার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ঘিরে রয়েছিল যে মানুষটার প্রতিটা দিনের লড়াইয়ের সাথে, এমনকি তাঁর হার না মানার এই মানসিকতাকে যে নিয়ে এসেছিল শহর-মফস্বল থেকে শুরু করে উপমহাদেশীয় অলিগলির প্রকাশ্যে… সেই মানুষটার জীবনের ছোট-বড় প্রতিটা মুহুর্তের সাথে জড়িয়ে রয়েছিল ক্রিকেটের আবেগ, অনুভূতি সবকিছু।
যে হাজার হাজার হেরে যাওয়া তরুণের বুকে লিখে দিয়েছিল জীবন যুদ্ধের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়েও লড়ে যাওয়ার শাশ্বত প্রাণমন্ত্র। যে আজন্ম অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে এগিয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্যের দিকে। যে নাম উলঙ্গ হয়ে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটকে সবুজ চারাগাছ হয়ে দিয়ে গিয়েছিল মহীরুহের ছায়া। সেই সুঠাম দেহসম্পন্ন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, দৃঢ় মানসিক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিটি অন্য আর কেউ নয়…, আমাদের সকলেরই প্রিয় ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ নামে খ্যাত বাঙালি তথা ১৩১ কোটির মহারাজা… সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর অফ ড্রাইভের স্কোয়ার কাট আর কভার ড্রাইভের স্টেপ আউটের কথা ভাবলে আজও কেঁপে ওঠে বিরোধী পক্ষ। তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় ক্রিকেট প্রথমবার করেছিল ব্রিটিশদের দর্পচূর্ণ। তাঁর কাছ থেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম আজও পেয়ে যাচ্ছে লাল, হলুদ, সবুজ প্রতিটা রঙের চোখে চোখ রেখে, মাথা উঁচু করে কথা বলার দুঃসাহস; এমনকি জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়েও মাঠ না ছাড়ার অনুপ্রেরণা। কিন্তু সে যখন ব্যাট হাতে মাঠে নেমে প্রতিদিন নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি করত, তখন আমি খুবই ছোট। ক্রিকেটের ক, খেলার খ, ব্যাট বলের ব… এর কোনোটাই ভালোভাবে বুঝতাম না।
আর তাই এই মহান ব্যক্তির কৃতিত্বকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্যও আমার কখনো হয়ে উঠেনি। যখন থেকে ক্রিকেটকে বুঝতে আরম্ভ করি, ভালোবেসে দেখতে আরম্ভ করি, ঠিক সেই সময়ই এই ব্যক্তি চিরতরে বিদায় নিল নীল জার্সি থেকে। আর সরাসরি যা দেখেছি তাঁর ওই আই পি এলের শেষ দু-তিন বছরের ম্যাচ কটাই। তাই যখনই তাঁর ব্যাট হাতে কীর্তির হাইলাইট টিভিতে দিয়েছে নিত্যনতুন ভেবে তাঁকে জেনেছি, বুঝেছি। কিন্তু আমার এমন একটাও দিন যাই নি যে বাবা, দাদাদের মুখে তাঁর কোনো গল্প শুনিনি। তাই তাঁর নিত্যদিনের লড়াই, যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার মন্ত্র, বেঁচে থাকার সংগ্রাম… সকল কথাই আজ আমার জানা। আর তাই এই বিশ্ববরেন্য প্রতিভার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
শুনেছি সালটা নাকি ছিল ১৯৯২, সেইসময়কার বিধ্বংসী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে “তোমার আমার মতোই মাছে ভাতে বাঙালি” সেই তরুন যুবকের ছিল অভিষেক ম্যাচ, কিন্তু ওই ম্যাচে সেই সাদামাটা তরুন নাকি করেছিল মাত্র তিন রান। আর এই ব্যর্থতার কারণেই সে সাথে সাথে বাদ পরে যায় আন্তর্জাতিক দল থেকে। আর তাঁর বাদ পরার কারণ জানতে চাইলে নির্বাচকেরা নাকি বলেন, “সৌরভ অহংকারী, ক্রিকেটের প্রতি তার কোনো মনোভাবই নেই”। কিন্তু শুনেছি সে নাকি একটু আলাদাই ছিল। তাঁদের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জকে মাথা উঁচু করে গ্রহণ করেছিল এবং সেই চ্যালেঞ্জটাকে অনায়াসে জিতে মহারাজার মতো ফিরেও এসেছিল।
তারপরই তাঁর জীবনে স্বর্ণযুগের রূপকার হয়ে আসে ১৯৯৬ সাল। সময়টা ছিল তাঁর টেস্ট আবির্ভাব। আর সেদিন নাকি সেই তরুণ ইংলেন্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসের ময়দানে সেঞ্চুরি করে অনার্স বোর্ডে ফুঁটিয়ে তুলেছিল নিজের নাম। পরের টেস্টেও নাকি ট্রেন্ডব্রিজের মেঘলা আবহাওয়ার নীচে ১৩৬ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলে অভিষেকে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে গড়ে গিয়েছিল এক দুর্লভ রেকর্ড। তারপর ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করে সেই ছেলেটাই নাকি বিশ্বকাপে একক সর্বোচ্চ রান আর রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে ৩১৮ রানের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ করে আরো দু’টো নতুন রেকর্ডের পাশে বসিয়ে দিয়েছিলে নিজের নাম।
একদিনের ক্রিকেটে ১০০০০ রান, ১০০ উইকেট, ১০০ ক্যাচ রেকর্ড, ৯০০০ রানের মাইলস্টোন সবচেয়ে দ্রুত ছুঁতে পারার সে-ই নাকি ছিল প্রথম ভারতীয় খেলোয়াড়। তাঁর ৪৯ টেস্টে ২১ টা জয়, যার মধ্যে ১৩ টাই ছিল দেশের বাইরে। পাকিস্তানকে পাকিস্তানে মারা, ক্রিকেটিয় দলের ত্রাস অস্ট্রেলিয়ার চোখে চোখ রেখে কেড়ে আনা ফলোও অন টেস্ট, স্টিভ ওয়াহর মতো প্রভাবশালী অধিনায়ককে টসের জন্য মাঠে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ওয়াংখেরেতে ফ্লিনটফের অসভ্যতামী সহ্য না করে লর্ডসের ব্যালকনিতে গিয়ে জামা ওরানো, আর ১৩ জুলাই ২০০২-এর নেটউয়স্ট সিরিজের সেই অবিস্মরণীয় মুহুর্ত… কী ছিল না তাঁর ক্যারিয়ারে! অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রী। ৮১.৮১% জয়ের গড় আরো কত কী! সেই ছেলেটাই আবার ২০০৪ সালে সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৫ জন দামাল তরুনদের নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে সেইসময়ের ভয়ংকর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেখানে কিছুটা সফল হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু কথায় আছে না… ভাগ্যের সাথে লড়াই করে আমরা কেউই কোনোদিন জিততে পারিনি, আর সেই ছেলেটাও সেদিন পারেনি। পারেনি ভারতকে জেতাত, পারেনি নিজের প্রাপ্তির ঝুলিকে বিশ্বকাপ দিয়ে পূর্ণ করতে।
তাই বলেই হয়তো তাঁকে বারবার নানা ঔদ্ধত্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে হয়েছে। আর নানান ভাবে নানান লোকের হীনমন্যতার স্বীকার হতে হয়েছে। নিজের ক্রিকেট যাপনের পদে পদে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে হাজারো অপ্রাপ্তি, বঞ্চনা আর শুনতে হয়েছে তাঁকে নিয়ে সেই তথাকথিত মানুষগুলোর ব্যাঙ্গ করে বলা নানান কথা। আসলে সেই তথাকথিতরা ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল হয়ে গিয়েছিল তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে, আর সেই কারণেই তাঁর ভবিষ্যত মহীরুহ হওয়ার সম্ভাবনাকে অচিরেই শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে কখনোই হার মানেনি, বার বার লড়াই করে ব্যাট হাতে নির্ভয়ে ফিরে এসেছে। কারণ ভারতবর্ষে নির্ভীকতার আরেক নাম… সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যার নাম শুনে সারাভারত সবকিছুই সঠিক হওয়ার প্রত্যাশায় রাতে শান্তির ঘুম ঘুমোতে পারে, যার নাম শুনে সারা স্টেডিয়াম সমস্বরে ফেটে ওঠে আবেগের এক শব্দে, দাদা… দাদা…।
অভিশপ্ত সেই ১৯৯৯ এ ভারতীয় ক্রিকেট যখন মিথ্যা আরোপে চূর্ণ বিচূর্ণ, ভারতীয় ক্রিকেটর নৌকা যখন টালমাটাল, সচীন ছেড়ে দিয়েছিল অধিনায়কত্ব, গড়াপেটায় বিধ্বস্ত আজহারের ক্যারিয়ার, তখন সেই ‘কোলকাত্তা কা রসগোল্লাই’ তাঁর দিকে ছুড়ে দেওয়া অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জটাকে অদম্য সাহসিকাতায় গ্রহণ করে বিফলতার গভীর স্রোতে ডুবে যাওয়া ভারতীয় দলকে বের করে আনে। এবং ভারতের গন্যমাধ্যম ও জনগনকে আশ্বাস দেয়… “আজ থেকে আমরা পরিষ্কার ক্রিকেট খেলবো, আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন”।
আর সে তাঁর দেওয়া কথা, তাঁর দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতির প্রতিক্ষণে প্রতিমুহূর্তে মান রেখে গিয়েছিল। তারপর আবার ‘সম্বরনের সেই কোটার মালটাই’ দিন রাত একাকার করে নিজেরই ক্রিকেট জীবনে নানা ঝুঁকি নিয়ে নিজহাতে একে একে নির্মাণ করে ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী যুগের হাজারো অস্ত্র, হাজারো যোদ্ধা। ভারতীয় ক্রিকেটকে শেখায় প্রতিটা ম্যাচে জিততে, আর না জিতলেও প্রতিমুহূর্তে আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে। আর এই জন্যেই মনে হয়… ক্রিকেটর ইতিহাসে যতবার আক্রমণাত্মক খেলার কথা ওঠে ততবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নেওয়া হয় তাঁর নাম। কারণ ভারতবর্ষে নির্ভীকতার আরেক নাম… সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
এভাবেই সেদিনের সেই ছেলেটা তরুন যুবক থেকে ক্রমে ক্রমে ‘গড অব অফসাইড’, ‘ওয়ারিওর প্রিন্স’, ‘মহারাজা’, ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’ আরও কত কি নামে নিজেকে খ্যাত করে হয়ে ওঠে আজকের এই মহান ব্যক্তিত্ব। ভারতমাতা রত্নগর্ভার গর্ভে যুগে যুগে যেসব বিশ্ববরেন্য প্রতিভা জন্ম নেয় তাঁদের মধ্যে এই ব্যক্তিও শুধুমাত্র নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় হয়ে ওঠে অন্যতম। আর তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় দলে একে একে সুযোগ পায় জাহির, সেহওয়াগ, যুবরাজ, নেহরা, কাইফ ও আজকের যুগের অন্যতম প্রিয় তথা সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এই মহান ব্যক্তিই ভারতীয় ক্রিকেটের ‘কর্ণ’ দ্রাবিড়ের ওয়ানডে কেরিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাঁকে উইকেট কিপার হিসেবে মাঠে দাঁড় করিয়ে। সেহওয়াগকে বলেছিল ২৫ নম্বর ম্যাচে শূণ করলেও ২৬ নম্বর ম্যাচ তুই খেলবি, যতক্ষণ আমি অধিনায়ক হিসেবে আছি।
এমনকি নিজের ক্যারিয়ারকে বাজি রেখে বোর্ডের ঘোষনা উপেক্ষা করে বিদেশের মাটিতে নিয়ে যায় হরভজন, কুম্বলের মতো নতুনদের। এই মহান ব্যক্তিই নিজে ব্যটিং অর্ডারে নীচের সারিতে নেমে এসে নিজের যায়গায় সুযোগ করে দিয়েছিল ধোনিকে। আর বাকিটা তো… প্রত্যেকের কাছেই আজ ইতিহাস!
ভাবতে খুব কষ্ট হয়, একজন সফল ক্রিকেটার যে কিনা নিজের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে এতো সাফল্য, এতো কৃতিত্ব অর্জন করে গেছে; ভারতীয় ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিমুহূর্তে নিজেরই আশা-আকাঙ্ক্ষার বাজী রেখেছে। সেই মানুষটাই কি না নিজের সারাজীবনে কারো কাছ থেকে স্বল্পমাত্র নিরাপত্তা কিংবা সাহায্যের আশ্বাস পায়নি এবং শান্তিতে ক্রিকেটটাও খেলতে পারেনি। আর এইজন্যই হয়তো হঠাৎ করে একদিন সন্ধ্যায় অবসর ঘোষণা করে বলেছিল… “আজ রাতে আমি শান্তির ঘুম ঘুমবো।” তাই একটা কথা আজ নিঃসন্দেহে, নিশ্চিন্তে বলতে পারি… ভারতীয় ক্রিকেটের সাথে প্রতিটা ক্রিকেট অনুরাগীর শয়নে-স্বপনে-মননে-চিন্তনে এই মহান প্রতিভা আজীবন ক্রিকেটীয় সাম্রাজ্যের চিরতেরের ‘মহারাজা’ হয়ে থেকে যাবে।
শুভ জন্মদিন দাদা। তুমি আরও বেশি সাফল্যের স্বাদ পেতে থাকো এবং আরও বেশি ভালোবাসা পেতে থাকো। মাঠে হোকে কিংবা বাইরে তোমার জয়ধ্বনি এভাবেই প্রতিধ্বনিত হোক বিশ্বের চারিদিকে। তাই শুধু আজ নয়… সারাবছরই চলুক তোমার দাদাগিরি, বাঙালির দাদাগিরি। খুব খুব ভালো থেকো তুমি।