নিজস্ব প্রতিনিধি,পূর্ব মেদিনীপুর: মানব সভ্যতা থেকে তালপাতার তৈরি হাতপাখার অবদান প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল।কিন্তু সুপার সাইক্লোন আম্ফানের দাপটে বিদ্যুৎ পরিষেবা অচল, তাই হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে।শুধু বেড়েছেই না হঠাৎ করে প্রচুর চাহিদাই বেড়েছে হাতপাখার। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয় রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই প্রচুর পরিমানে হাতপাখার চাহিদা বেড়ে চলছে। গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে মানুষ ভরসা করছে হাতপাখায়। কিন্তু হঠাৎ এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান গোটা চিত্রের একেবারে অদল বদল ঘটিয়ে ফেলেছে। এতদিন এয়ারকন্ডিশন, এয়ারকুলার সহ ইলেকট্রিক ফ্যানের ওপর ভরসা ছিল সাধারণ মানুষের। গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
অধিকাংশ ইলেকট্রিক পোষ্ট এখনও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে মানুষের কাছে এখন আর এয়ারকন্ডিশন, এয়ারকুলার, ফ্যান চালানোর সম্ভব নয়। সেই পাল্লা দিয়ে জেলাজুড়েই চলছে তীব্র গরম। এমন পরিস্থিতিতে গরমের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ ভরসা করছে সেদিনের সেই হাতপাখার ওপর। হঠাৎ করে এভাবে জেলাজুড়ে হাতপাখার চাহিদা বাড়ায় আর্থিক লাভের সম্মুখীন হচ্ছেন জেলার পাখা কারিগররা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের ডিমারির পাকুড়িয়া গ্রামের কয়েকশো মানুষ এই পাখা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েকবছরে পাখা বিক্রির হার একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল।
কিন্তু বর্তমানে চাহিদা একেবারে আকাশ ছোঁয়া পর্যায়ে ঠেকেছে। ইতিমধ্যে তমলুকের ডিমারি থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫০- ৬০,০০০ হাতপাখা রপ্তানি হয়েছে। যেহারে চাহিদা বেড়েছে তাতে রাতদিন এক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কারিগররা। প্রতিটি তালপাতার পাখার দাম রয়েছে ১০ টাকা ও প্লাস্টিকের পাখার দাম ৫টাকা। কারিগর তৈরি করে দিনে এক একজন প্রায় ২৫০- ৩০০ টাকা উপার্জন করছেন। ইতিমধ্যে এই হাতপাখা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়াতেও।
হাতপাখার কারিগর পরিমল মন্ডল বলেন ঝড়ের পরেই প্রচুর এই হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে। রোজ ৫০০০- ১০,০০০ হাতপাখা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দোকানে যাচ্ছে। হঠাৎ এভাবে হাতপাখার চাহিদা এভাবে বাড়বে তা ভাবতেই পারেনি।
সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে এখন সাধারণ মানুষের অন্যতম ভরসা এই হাতপাখা।