খবরএইসময়, ওয়েব ডেস্ক: বিদায়ী বছরে মূল্যস্ফীতির চাপে অনেকটাই পিষ্ট ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি,পরিবহন,আবসনসহ প্রায় সব খাতের সেবা ও পণ্যের দাম বেড়েছে। এই সংকটের পেছনে মোটাদাগে দুটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। তা হচ্ছে করোনা মহামারি ও যুদ্ধ। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে, কমবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মন্দার আশঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি।
এই মন্থর বিশ্ব অর্থনীতির মুখে দাঁড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট হাজার হাজার চাকরি ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মার্কিন সফটওয়্যার সংস্থা মাইক্রোসফট কয়েক দিনের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযান শুরু করবে (Microsoft Job Cuts)।
মাইক্রোসফটে এই মুহূর্তে কর্মরত রয়েছেন ২,২০,০০০ কর্মী। যাদের মধ্যে ৬,০০০ কর্মী যুক্তরাজ্যের। জানা যাচ্ছে, সংস্থা মোট কর্মশক্তির ৫% বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে (Microsoft Job Cuts)। যা প্রায় ১১,০০০ কর্মীকে কর্মসংস্থান হারা করবে। যদি কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে সংস্থা অনড় থাকে তাহলে আগামী ২৪ জানুয়ারি মাইক্রোসফট চেয়ারম্যান সত্য নাদেলা এবং চিফ এক্সিকিউটিভের তরফে ঘোষণা করা হবে, ঠিক কত সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হবে সংস্থা থেকে।
বিগত কিছু দিনে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে নেমেছে। নতুন বছরে অ্যামাজন (Amazon) ১৮,০০০ কর্মী বাদ দিয়েছে। ক্লাউড সফটওয়্যার প্রদানকারী সংস্থা সেলসফোর্স (Salesforce) ৮,০০০ চাকরি ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে মেটা (Meta) তার ১১,০০০ কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে। টুইটার (Twitter) থেকে ৬,০০০ চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ইলন মাস্ক (Elon Musk)।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার জেরেই বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি গুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযান শুরু করেছে। করোনা মহামারি চলাকালীন এই সকল সংস্থা গুলোতে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে সংস্থা গুলি নিজেদের ধ্বসে যাওয়া অর্থনীতি পুনরায় সাজিয়ে তুলতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথেই এগোচ্ছে।তবে অন্য দেশগুলির তুলনা ভারতীয় অর্থনীতি অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে এখানকার অর্থনীতি।
উল্লেখ্য,গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদনে বলেছিল, গোটা বিশ্বের অর্থনীতির চাকা মন্থর হলেও, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এখনও যেন অপ্রতিরোধ্যই রয়েছে। IMF-এর এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের ডিরেক্টর, কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে,অন্য দেশগুলির তুলনা ভারতীয় অর্থনীতি অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে এখানকার অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ তো বটেই, এমনিতেও ভারতীয় অর্থনীতির একটি ‘আত্মনির্ভর’ বৈশিষ্ট্য বরাবরই রয়েছে। আর তার কারণেই গোটা বিশ্বের খারাপ অবস্থার আঁচ ভারতে তুলনামূলকভাবে কম পড়ছে।
তবে প্রভাব যে একেবারেই পড়ছে না, তা নয়। IMF FY23-তে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুমান জুলাইয়ে ৭.৪% বলে জানিয়েছিল। সেখান থেকে কমিয়ে এবার ৬.৮% হতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। অগস্টে প্রকাশিত ভারতের সরকারি তথ্যানুযায়ী, উত্পাদন খাতের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে এপ্রিল-জুলাইতে অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে কম(১৩.৫%) হারে বেড়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সংকুচিত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতি- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চিনের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশে মুদ্রাস্ফীতি রোধে মুদ্রানীতি কঠোর করার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) প্রশংসা করেছে আইএমএফ। আইএমএফের মুদ্রা ও বাজার মূলধন বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রধান গার্সিয়া পাসকুয়াল RBI-এর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আরবিআই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াতে সঠিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।’