শুক্লা রায়চৌধুরী, ব্যারাকপুরঃ রাজ্যের অন্যান্য জেলা গুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। কৃষি এবং শিল্প দুটোই এই জেলায় পরিপূর্ণ।বিশেষ করে ব্যারাকপুর মহাকুমা। হুগলি নদীর তীর ঘেঁষে এই ব্যারাকপুর মহাকুমাতেই ১৮ টি জুট মিল আছে, ফলে এই শিল্পাঞ্চলের দিকে নজর থাকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের। শুরুটা হয়েছিল বাম আমলে। পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করার পর বাম আমল থেকেই উত্তর ২৪ পরগণা জেলাকে প্রাধান্যতা দিয়ে এসেছে। রাজ্যে নির্বাচন হলে সকলেই যেন তাকিয়ে থাকতেন ব্যারাকপুরের দিকে।এই ভেবেই তাকাতেন যে, সব থেকে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতবেন ব্যারাকপুরের সাংসদ।আর হতও রেকর্ড। সিপিএমের তড়িৎবরণ তোপদার ৬বারের জন্য সাংসদ হয়েছিলেন।বাম আমলে এই উত্তর ২৪ পরগণা জেলা তৎসহ ব্যারাকপুর মহাকুমা ছিল রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। বাম সরকারের একাধিক মন্ত্রী রাজ্য চালাতেন এই এই জেলা থেকেই।মন্ত্রিসভায় ছিলেন ডঃ অসীম দাসগুপ্ত থেকে শুরু করে সুভাষ চক্রবর্তী ,শান্তি ঘটক,শঙ্কর সেন ছিলেন অমর চৌধুরী, রাধিকা ব্যানার্জি এবং বিদ্যুৎ গাঙ্গুলি আর ছিলেন রঞ্জিত কুণ্ডু।
৫বারের সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারের হারের পর ব্যারাকপুরে তৃণমূল সরকারও ভরসা করেছিল ৪ বারের বিজয়ী বিধায়ক ভাটপাড়ার অর্জুন সিংকে। সেইমত ২বারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকেও রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতিয়ে ব্যারাকপুরের মান রেখেছিলেন অর্জুন বাবু।তবে তৃণমূল কংগ্রেসও এই রাজ্যে সরকার গঠন করার পর দক্ষিণমুখী হলেও এই উত্তর ২৪ পরগণা জেলাকে কিছুটা হলেও প্রাধান্যতা দিয়েছেন। এই জেলা থেকে যেমন মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন উপেন বিশ্বাস,মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মদন মিত্র তেমনই পেয়েছেন ডঃ অমিত মিত্র, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পূর্ণেন্দু বসু , তাপস রায় পেয়েছেন ব্রাত্য বসু ও সুজিত বসু।
পাশাপাশি ৪ বারের বিধায়ক হয়েও অর্জুন সিং সেই অর্থে তৃণমূল সরকার থেকে যোগ্য সম্মান পাননি বলে অভিযোগ করে ২০১৯ সালে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেন এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ হন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ২০১৯ সালে বিজেপি এই রাজ্যে ১৮ টি কেন্দ্রে জয়ী হয়। এরপর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যপকভাবে পরিবর্তন আসে।বেশ কিছু তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা নেতা-নেত্রী থেকে বিধায়ক বিজেপিতে যোগদান করেন।
এরপর , ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে৷ রাজ্যে পরিবর্তন দরকার৷ তিনি দাবি করেছিলেন,আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার গড়বে বিজেপি৷এখন তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখে রেখে তাঁর নির্দেশ মতই ঝাঁপিয়ে পড়েছে বঙ্গ বা বাংলার বিজেপি। করোনা আবহের মধ্যেই রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিকস্তরে বড়সড় রদবদল হল সোমবার রাজ্য বিজেপি সদর দপ্তরে।এবারও সেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা।
তালিকার সিংহভাগ দখল করে নিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো বহু তারকা নেতা-নেত্রী৷সব্যসাচী দত্ত থেকে দুলাল বর, বিজেপির সাংগঠনিক পদে বসলেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো মুকুলপন্থীরা৷সাথে চিরাচরিত ব্যারাকপুর মহাকুমা।এবার যেমন বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ফাল্গুনী পাত্রের পদন্নোতি হল তেমনই যে সম্মান তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে দেয়নি, সেই দলীয় সাংগঠনিক পদে বসিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং কে যোগ্য সম্মান দিল বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রস্তাবিত তালিকাই হুবহু মেনে নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।বিজেপির নয়া রাজ্য কমিটিতে সভাপতি পদে বসছেন দিলীপ ঘোষ৷ সহ সভাপতি পদে অন্যান্যদের সাথে বসছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। পাশাপাশি অন্যন্যদের সাথে সম্পাদক পদে বসছেন ফাল্গুনি পাত্র।
সল্টলেকের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।এবং এসসি মোর্চা পদে বসছেন দুলাল বর। দলে নতুন পদে আসীন হয়ে অর্জুন বাবু বলেন, ‘ আমি ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘন্টা মানুষের কাজ করি। নিজের এলাকা তো বটেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও দলের কাজে আমাকে যেতে হয়। তখনও আমার এলাকার মানুষের জন্য একজন সাংসদ হিসেবে যা কিছু কাজ করার সমস্ত কাজ করে রেখে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই লকডাউনের পিরিয়ডে সকাল সাতটা থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিলি করতে বেরিয়ে যাচ্ছি। তবে একটা বিষয়ে খুবই খারাপ লাগছে এই জেনে কি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই করোনা আবহের সাথে সাথে উম্ফুন নিয়েও এখন রাজনীতি করে যাচ্ছেন। মানুষ দু- মুঠো খাবার পাচ্ছেন না, জল নেই, নেই মাথার উপর ছাদ। এমতবস্থায় রাজনীতি বন্ধ করে মানুষের পাশে থাকা উচিত। তা না করে উনি কোথায় বিজেপি সাংসদরা ত্রান দিতে যাচ্ছেন তাঁদেরকে পুলিশ দিয়ে আটকাচ্ছেন।মানুষের পাশে কারা আছে সেটা মানুষই যোগ্য জবাব দেবেন ২০২১ শে ব্যালটের মাধ্যমে।’