খবর এইসময়, নিউজ ডেস্কঃ ১৯৬২ সালের যুদ্ধে শেষবার ভারতীয় জওয়ানদের আটক করেছিল চিন। ঠিক তার ৫৮ বছর পর গত ১৫ই জুন অতর্কিত হামলা করার পর সেই একই কাজ করল সে দেশের সেনা। গালওয়ান উপত্যকায় গত সোমবার সংঘর্ষের সময় ভারতীয় ১০ জওয়ানকে আটক করে রেখেছিল চিনের সেনা। কূটনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই ১০ জওয়ানকে ছেড়ে দিল চিন। নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কমপক্ষে দু’জন অফিসার-সহ ১০ জন জওয়ান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে অর্থাৎ ভারতে ফিরে এসেছেন। তারপর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন আধিকারিকরা।
গত সোমবার রাতের সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় এবং চিনা সেনার মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হয়। গালওয়ান উপত্যকায় প্যাট্রোল পয়েন্ট ১৪-র কাছে তিন দফার বৈঠকে ১০ জন ভারতীয় জওয়ানকে ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সমাধানসূত্র বের করা হয়। বৃহস্পতিবার তৃতীয় বারের জন্য বৈঠকে ভারতে প্রতিনিধিত্ব করেন কারুতে সদর দফতর থাকা ৩ ইনফ্র্যান্টি ডিভিশনের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল অভিজিৎ বাপত।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভারতীয় জওয়ানদের নিরাপত্তার খাতিরে সেই আলোচনা অত্যন্ত গোপনে চালানো হয়েছিল। এমনিতেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেড়ে গিয়েছে। তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল।
তবে বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনার তরফে শুধু জানানো হয়, গালওয়ান সংঘর্ষে কোনও ভারতীয় জওয়ান নিখোঁজ নেই। কিছুক্ষণ পর বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও একই মন্তব্য করা হয়।
৫৮ বছর আগে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে শেষবার ভারতীয় জওয়ানদের আটক করেছিল চিন। তারপর ১৯৭৫ সালের পর সোমবার রাতে প্রথমবার চিনের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ভারতীয় জওয়ানরা। ৪৫ বছর আগে অরুণাচল প্রদেশে সেই একই ঘটনা ঘটেছিল। পাশাপাশি, সোমবারের ঘটনায় ৭৬ জন ভারতীয় জওয়ান আহত হয়েছেন। তাঁরা আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিনের তরফেও হতাহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪৩ বলে সূত্রের খবর। তবে তা নিয়ে মুখ খোলেনি বেজিং।
তবে ভারতীয় জওয়ানদের আটক করে চিন বিশ্বের কাছে ভিন্ন ব্যাখ্যা তুলে ধরতে চাইছে বলে মত এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কম্য়ান্ডারের। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ‘চিন যেটা অর্জনের চেষ্টা করছিল, সেটা ইতিমধ্যে ছিনিয়ে নিয়েছে – গালওয়ান উপত্যকা এবং ফিঙ্গার ৪-এর উপর নিয়ন্ত্রণ। জওয়ানদের ফিরিয়ে দিয়ে ওরা (চিন) বিশ্বকে বার্তা দিতে চাইল যে তারা আগ্রাসী নয় এবং তারা তাঁদের ফিরিয়ে দিল, যাঁরা ওদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।’