৩৩ বছর বয়সী যুজবেন্দ্র চাহাল (Yuzevendra Chahal) ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননি। তিনি ভারতের ওডিআই এবং টি২০ স্কোয়াডের অংশ ছিলেন। উভয় ফরম্যাটেই তার ৬-৭ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু গত বছরটা তাদের জন্য ভালো ছিল না। গত বছরের জানুয়ারিতে শেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন তিনি। গত বছরের আগস্টে প্রায় ৮ মাস টি-টোয়েন্টি দলের বাইরেও ছিলেন তিনি। তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার নিয়ে অনেক কথা উঠেছিল। তাঁর স্ত্রী এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ধনশ্রীর পোস্টটিও আলোচিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি চাহাল।
গত বছরও তাই হয়েছিল। এবার আসা যাক বর্তমান সময়ে। যুজবেন্দ্র চাহাল বর্তমানে আইপিএল ২০২৪-এ খেলছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৩টি উইকেট পেয়েছেন। পার্পল ক্যাপের দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। প্রথম স্থানে রয়েছেন জসপ্রিত বুমরা। বুমরার উইকেট সংখ্যাও ১৩। কিন্তু গড় ভাল হওয়ার কারণে চাহালের থেকে এগিয়ে আছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেরর এই ফাস্ট বোলার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে চাহাল আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মহম্মদ নবিকে আউট করার মাধ্যমে ২০০ উইকেটের মালিক হয়েছেন। চাহালের এই পারফরম্যান্সে আরও একটি বিশেষ বিষয় রয়েছে। এই মরশুম শুরুর আগে তিনি দাবি করেছিলেন যে এবার তিনি পার্পল ক্যাপ জিতবেন। এখন, অর্ধেক মরশুমের পর, তিনি নিজের দাবি রক্ষায় দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হল, টিম ইন্ডিয়ার নির্বাচকরা কি তাদের মত বদলাবেন? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য কি চাহালকে বিবেচনা করা হবে?
সাম্প্রতিক সময়ে কুলদীপ যাদবকে নাম্বার ওয়ান স্পিনারের জায়গা দেওয়া হয়েছে। আর অশ্বিনকেও “বিশেষ” হিসাবে বিশ্বকাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি মাত্র একটি ম্যাচেই প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন। দলে ওপর স্পিনার হিসেবে আছেন স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। সত্যিটা হল, গত কয়েক বছরে প্রথম স্পিনারদের চেয়ে দলে দ্বিতীয় স্পিনারদের জায়গা অনেক বেশি মজবুত মনে হয়েছে। এর পেছেনের অঙ্কটা খুবই সহজ। রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাট হাতেও অবদান রাখেন। এছাড়াও, তিনি একজন দুর্দান্ত ফিল্ডার। এখন সব প্যাচ এখানেই এসে আটকে গেছে। দলে রবীন্দ্র জাদেজার জায়গা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে যে, কোন যুক্তিতে দলে সেই বোলারকেই নেওয়া হবে, যিনি ব্যাট করতে পারেন।
বিরাট কোহলির সময় থেকে এখন পর্যন্ত, টিম ইন্ডিয়ার এই চিন্তাভাবনা কিছু খেলোয়াড়ের প্রতি ন্যায়বিচার করছে না। চাহালের ব্যাটিং দুর্বল। কুলদীপ যাদবও ব্যাট করতে পারতেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে তিনি দলের এই প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন এবং নিজের ব্যাটিং নিয়েও কাজ করছেন। আইপিএলের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ক্রিজে নিজের ব্যাটের জোর দেখিয়েছেন। তিনি ২০-৩০ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। আইপিএলের চলতি সিজেনে এখনও পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সামান্য চোটে তাকে অল্প সময়ের জন্য বিশ্রামও দেওয়া হয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দলে তার জায়গা পাওয়া ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। প্রশ্নটা দ্বিতীয় স্পিনারকে নিয়ে। প্রশ্নটি কুলচার জুটির ‘চা’ সম্পর্কে।
যুজবেন্দ্র চাহাল আইপিএলের প্রতিটি সংস্করণে উইকেট শিকারী হিসেবে তালিকায় প্রথম দিকেই থাকেন। কেবল এক আধ সিজেনই হয়ে থাকবে যেখন তিনি পার্পল ক্যাপের দৌড়ে ছিলেন না। ২০২২ সালে তো উনি ২৭ উইকেট শিকারের মাধ্যমে পার্পল ক্যাপ নিজের নামে করেছিলেন। এছাড়া গত সিজেনে চাহাল ২১ উইকেট নিয়েছিলেন, ২০২০ সালে ২১টি, ২০২১ সালে ১৮ উইকেট ছিল তার নামের পাশে। এবার টেকনিকালি ব্যাখ্যা করা যাক, চলতি সিজেনে চাহাল আলাদা কি করছেন? সবার আগে তো তিনি হাওয়ায় বল স্পিন করানোর ক্ষেত্রে চাহাল এক নম্বর স্পিনার। এছাড়াও, চাহালকে পিচ থেকে টার্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও বাকিদের তুলনায় সেরা মনে হচ্ছে। এই মরশুমে বোলিংয়ের সময়ও চাহালের মাস্টার প্ল্যান দেখা গেছে। মাস্টার প্ল্যানটি হল, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের নাগালের বাইরে বল করা।
দেখে মনে হচ্ছে তিনি ‘ওয়াইড বল’ লাইনকে লক্ষ্যবস্তু করছেন, যাতে ব্যাটসম্যানরা ক্রস শট খেলতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ব্যাটসম্যানদের খেলতে গিয়ে ঝুঁকি নিতে হয়। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে যুজবেন্দ্র চাহালের প্রস্তুতিও ভিন্ন। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে চাহাল গুগলির বদলে স্লাইডারকে ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। ‘ফ্লাইট’ ও ‘ড্রিফট’ করার ক্ষেত্রে যুজবেন্দ্র চাহাল চলতি আইপিএলের অন্যতম সফল স্পিনার। ড্রিফ্ট মানে বলটি প্রথমে বাতাসে আসে এবং তারপর আবর্তিত হয়। এই শিল্পটি খুব সীমিত স্পিনারদের মধ্যে দেখা যায়। তাই, দেখা যাচ্ছে চাহাল কেবল পার্পল ক্যাপ জেতার দাবিই করেননি, এর জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছেন এবং কঠোর পরিশ্রমও করেছেন। আইপিএলের পরপরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যৌথভাবে আয়োজক দেশ। এই ধরনের পিচে যুজবেন্দ্র চাহালকে উপেক্ষা করা কঠিন হবে। বিশেষ করে চাহাল যেরকম যে ফর্মে আছেন, তার পর নির্বাচন কমিটিকে তার নাম বিবেচনা করতেই হবে। যদি না সেই একই মনোভাব বাধা হয়ে না দাঁড়ায়- ‘চাহাল তো ব্যাট করতে পারে না’।