Afganistan Win: সেমিফাইনালে আফগানিস্তান, বাংলাদেশকে হারিয়ে অজিদের বিশ্বকাপের বাইরে করল রশিদরা

এ যেন ফাইনালের আগেই মেগা ফাইনাল! হ্যাঁ, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের (Afganistan Win) মধ্যকার ম্যাচটি অন্তত তেমনই উত্তাপ ছড়িয়েছে। এক ম্যাচ, লড়াই ত্রিমুখী! দুটি দল মাঠে, আরেকটি দল পয়েন্ট টেবিলে। এমন লড়াইয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে ইতিহাস গড়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান।

ভাগ্য সবসময় সাহসীদের সঙ্গেই থাকে। সেটিই প্রমাণ হলো আফগানিস্তানের বেলায়। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠার পর অস্ট্রেলিয়া ও এবার বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল আফগানিস্তান। আর এর সঙ্গে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। ডিএলএস পদ্ধতিতে আফগানরা জিতেছে ৮ রানে। আর সেমিফাইনাল খেলার মর্ম বুঝতে না পারা বাংলাদেশ আরও একটি লজ্জার হার সঙ্গী করেই শেষ করলো এবারের বিশ্বকাপ সফর।

বার বার বৃষ্টির বাধায় পড়া ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত এক ওভার কমিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৪ রান। ১৮তম ওভারে নাভিন-উল-হক পর পর দুইবলে তুলে নেন বাংলাদেশের শেষ দুই উইকেট। তাসকিনকে বোল্ড করার পর লেগ বিফোর হয়ে মোস্তাফিজ আউট হলে ১০৫ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। পুরো ইনিংস ক্যারি করে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের হার দেখেন ৪৯ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত থাকা লিটন দাস।

রশিদ খান ২৩ রানে আর নাভিন-উল-হক ২৬ রানে শিকার করে ৪টি করে উইকেট। মূলত মাঝের দিকে রশিদ খানের বোলিংয়েই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। সৌম্য ও হৃদয়কে ফেরানোর পর ১১তম ওভারে পর পর দুই বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও রিশাদ হোসেনের উইকেট শিকারের মাধ্যমেই ম্যাচে জয়ের আশা জাগায় আফগানিস্তান।

এরপর দলীয় ৫০ পেরোনোর আগেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে লাল-সবুজেরা। অধিনায়ক শান্ত ৫ বলে ৫, সৌম্য ১০ বলে ১০ এবং শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব আল হাসান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন লিটন দাস। এরপর দ্রুতই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে ৪১ বলে সান্ত্বনার হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। লিটন উইকেট থিতু হলেও তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে আফগানদের জয় এনে দেন নাভিন উল হক। শেষ পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৫ বলে ১০৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ৪৯ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। আফগানদের হয়ে ৪টি করে উইকেট নেন নাভিন ও রশিদ খান।

এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে সর্তক শুরু করেন দুই আফগান ওপেনার জাদরান-গুরবাজ। ইনিংসের প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো দলই ফায়দা লুফে নিতে পারেনি। টাইগার বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলে আফগানরা। পাওয়ারপ্লের পর আক্রমণে এসেছিলেন সাকিব। তার প্রথম ৫ বল থেকে এসেছিল ৩টি সিঙ্গেল। এরপর ফুললেংথে পেয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে সাইটস্ক্রিন বরাবর ছক্কা মারেন গুরবাজ। এরপর বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম জুটি হিসেবে একই আসরে ৪ বার ৫০ পেরোয় গুরবাজ-ইব্রাহিম। তবে ইনিংসের ১১তম এসে ভাঙে এই জুটি রিশাদ। রিশাদকে জায়গা বানিয়ে তাকে খেলতে চেয়েছিলেন ইব্রাহিম। তবে ঠিকমত হয়নি। লং অফে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিম হাসান। ২৯ বলে ১৮ রান করলে এই ওপেনার ফিরলে ৫৯ রানে ভাঙে আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটি। এরপর বেশ চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে এসে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলে আজমতউল্লাহ ওমারজাইকে বিদায় করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফেরার আগে ১২ বলে ১০ রান করেন তিনি। পরের ওভারে আক্রমণে এসেই জোড়া উইকেট নিজের ঝুলিতে পুড়েন রিশাদ। প্রথমে উইকেটে জমে যাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বিদায় করেন। রিশাদকে অফ সাইডে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ কাভারে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। ফেরার আগে ৫৫ বলে করেন ৪৩ রান তিনি। এরপর গুলবিদনকেও ফেরান রিশাদ। সৌম্যই ফের ক্যাচ নেন। দুর্দান্ত এক ড্রাইভে সেই ক্যাচ নেন সৌম্য। ইনিংসের ১৮তম ওভারে মহম্মদ নবিকে প্যাভিলিয়নে পাঠান তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের শর্ট লেংথের সিম-আপ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন নবি। তবে সেভাবে হয়নি। মিড অফে সময় নিয়ে ক্যাচ নেন শান্ত। শেষ দিকে রশিদের ঝোড়ো ইনিংসে ১১৫ রানের পুঁজি পায় আফগানরা। ১০ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন আফগান অধিনায়ক। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রিশাদ। এ ছাড়া তাসকিন ও মোস্তাফিজের শিকার একটি করে উইকেট।

২৫ জুন, ২০২৪, তারিখটা আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত একটা দিন। সুপার ৮-এর ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপের বাইরে ছিটকে দিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছল রশিদ খান, গুরবাজরা। সেমিফাইনালে আফগানদের প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা। আগামী ২৭ জুন প্রথম সেমিফাইনালে এইডন মারক্রামদের মুখোমুখি হবে রশিদ খান ব্রিগেড। সেদিন আরেকটা ইতিহাস দেখার অপেক্ষায় গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।