Ananta Singh: বিপ্লবী থেকে ব্যাঙ্ক ডাকাত! অনন্ত সিংহের এক রহস্যময় জীবন

স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে ব্যাঙ্ক ডাকাত, আবার নকশালপন্থী – অনন্ত সিংহের (Ananta Singh) জীবন ছিল এক ধাঁধার মতো। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বীর নায়ক, যিনি সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন, দেশ স্বাধীন হলে তার জীবন যেন এক নতুন মোড় নেয়। কলকাতায় ফিরে গাড়ির ডিলারশিপের ব্যবসা শুরু করেন, আর অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর অর্থ, নাম ও যশ অর্জন করেন।

চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন অধ্যায়

এই বিপুল সাফল্যের মধ্যে অনন্ত সিংহ হঠাৎই সবকিছু ছেড়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তিনি তিনটি বাংলা চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন, যার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ছবি ছিল ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’। আজও ছবিটি দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। উত্তরবঙ্গে ছবির কাজ শেষ করে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন, কিন্তু এরপরই তার জীবনে এক নাটকীয় পরিবর্তন আসে। দেশের তৎকালীন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি তাকে গভীরভাবে হতাশ করে তোলে।

নকশাল আন্দোলন ও ব্যাঙ্ক ডাকাতি

হতাশা থেকে অনন্ত সিংহ (Ananta Singh) চরম বামপন্থী নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর শুরু হয় তার জীবনের আরেক অধ্যায় – ব্যাঙ্ক ডাকাতি। এই সময় তিনি কলকাতা ও পূর্ব ভারতে একের পর এক সরকারি ব্যাঙ্ক লুঠ করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, লালবাজার পুলিশ তাকে একবারও ধরতে পারেনি। তার এই রহস্যময় জীবন আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায় যে, ব্যাঙ্ক ডাকাতির সময়কালে তিনি কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বিভাগে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

পুরসভার রহস্যময় কর্মী

পুরসভার রেকর্ড রুমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনন্ত সিংহ বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু কে তাকে নিয়োগ করেছিল এবং কীভাবে তিনি এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলি হলেন, তার কোনো সূত্র আজও মেলেনি। লালবাজারের পুলিশ অফিসার রুণু গুহনিয়োগী তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দিনের পর দিন পুরসভার কেন্দ্রীয় ভবনে পড়ে থাকতেন। নিজের আত্মজীবনী ‘সাদা আমি, কালো আমি’-তেও তিনি এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

নিখুঁত পরিকল্পনায় ডাকাতি

অনন্ত সিংহ ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী ও ধূর্ত পরিকল্পনাকারী। যেকোনো ব্যাঙ্ক লুঠের আগে তিনি নিজেই সেই এলাকার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করতেন। তিনি হিসাব কষতেন ব্যাঙ্ক থেকে থানার দূরত্ব কত, পালানোর জন্য কোন রাস্তা নিরাপদ, পায়ে হেঁটে, ট্রামে বা বাসে গেলে কতটা সময় লাগবে – সবকিছুই ছিল তার নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি দেশের জন্য লড়াই করেছেন, তার এমন এক দ্বৈত জীবন আজও এক বিরাট রহস্য।

অনন্ত সিংহের এই জীবনকাহিনি সত্যিই এক মস্ত ধাঁধা। তার নিজের লেখা বইটিও এই রহস্যের কিছুটা সমাধান দিতে পারে। আপনার কি মনে হয়, কী কারণে একজন সফল ব্যবসায়ী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী এমন এক চরমপন্থার পথ বেছে নিয়েছিলেন? নিচে কমেন্ট করে জানান।