সঞ্জয় কাপরি, পূর্ব মেদিনীপুর: বাড়ির ছেলে বড় হয়ে যাওয়ার পর যতদিন পর্যন্ত না কোন কাজকর্ম করে সংসারের হাল ধরছে ততদিন বে- রোজগেরেদের বাড়িতে ‘অন্ন ধ্বংসের’ জন্য ‘বাপের হোটেলের’ খোঁটা শুনতে হয় প্রায়শই। এবার এই নামেই খুলে গেল হোটেল। এখানে দিনরাত কব্জি ডুবিয়ে খেলেও দিতে হবে না টাকা পয়সা। আশ্চর্যের বিষয় তাই না ? হ্যাঁ তাই বটে। তবে এখানে বলে রাখা দরকার যে এখানে কিন্তু মানুষের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ। আসবে শুধু অবলা জীব।
এমনই এক মানবিক কাজ করেছেন পরিবেশ প্রেমী এক শিক্ষক। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ১ ব্লকের কুলাইপদিমা নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্যামল জানার এই উদ্যোগ।
শ্যামল বাবুর বিবাহবার্ষিকী ২৫ এপ্রিল। সেদিন থেকেই কাঁথির আঠিলাগাড়িতে এই হোটেল চালু হয়েছে। যদিও এই হোটেলের জায়গা ওনার শশুরালয় । এই বাড়ির লিখিত কর্তা রবীন্দ্রনাথ দাস ও শ্যামল বাবুর স্ত্রী মনিকা জানার সহ যোগীতায় এই আয়োজন।
প্রথমদিন থেকেই প্রচুর ভিড়। কারণ, গরমে পশুপাখি সবার অবস্থাই খারাপ। বাপের হোটেল-এ যথেচ্ছ খাবার ও পানীয় জল পেয়ে ওরা প্রাণে বাঁচছে।
কি থাকছে মেনু ?
ওদের জন্য থাকছে কলা, আঙুর, শসা, কাঁচাছোলা, গম, সূর্যমুখী বীজ, ভুট্টা, বাদাম এবং অবশ্যই পানীয় জল। খাবারগুলি পরিবেশন করা হয় রংবাহারি নকশা করা, মাটির নানা মাপের পাত্রে। বাড়ির খোলা ছাদে এই হোটেল ২৪ ঘণ্টা খোলা। দড়িতে হনুমানদের জন্য সাজানো রয়েছে পাকাকলা।
শ্যামল বাবু সারা বছরই নানা সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন কিন্তু অনেকে আবার এসব কাজ দেখে খানিক মুখ বেঁকা করেন বটে কিন্তু তাতে শ্যামল বাবুর কিছু যায় আসে না বলেই জানান স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা। তারা আরও জানান, সবসময় সামাজিক কাজে পাওয়া গেছে ওনাকে। কখনও দুঃস্থদের পোশাক দান, কখনও বন্যা বা ঝড়-বিধ্বস্তদের ত্রিপল। বিভিন্ন জেলায় হাজার বট-অশ্বত্থের চারাও রোপণ করেছেন এবং তাঁর এই সব কর্মসূচি চলছে নিত্য নৈমিত্তিক ভাবেই।
“যদিও ‘বাপের হোটেল’ প্রসঙ্গে শ্যামল বাবু বলেন, “সামান্য প্রাথমিক শিক্ষক। বিবাহবার্ষিকীতে দামি উপহার দেওয়ার সাধ্য নেই। স্ত্রীকে খুশি করতে প্রচণ্ড দাবদাহে জীবসেবার ব্রত হয়েছি।”
তিনি জানান,বিবাহবার্ষিকী এবার তিনে পা দিলো। খানিক পাগল চিত্ত হলেও স্ত্রী মণিকা জানা সাথ দেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই । তবে সহধর্মিনী ওনাকে সহ্য করছে তার জন্য ঈশ্বরের কৃপা বলে ধন্যবাদ জানান শ্যামল বাবু।
শ্যামল বাবুর কান্ড দেখে অনেকে হাঁসছেন বটে আবার হাততালির যোগ্য বলে সাহসও জুগিয়েছেন সহ কর্মী থেকে নেটিজেনরা। মানুষের কথা ভাবে সবাই কিন্তু অবলারদের কথা কজনই বা ভাবে।