FIFA World Cup 2022:আরব্য রজনীর নয়া চরিত্র আল ওয়াইস

স্পোর্টস ডেস্ক: তাঁর পা বিপক্ষের জালে বল জড়ায়নি। তবুও লুসাইল স্টেডিয়ামে আরব বসন্তের অকাল বোধ- নের  কারিগর মহম্মদ বিন খালিল বিন ইব্রাহিম আল ওয়াইস।

বছর ছয়েক আগে এক নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বিশ্ব ফুটবলে অভিষেক আল হাসায় ভূমিষ্ঠ সন্তানের। অভিষেকের বছর দেড়েকের ব্যবধানে দেশের ক্লাব ফুটবলে সেরা গোলরক্ষকের সম্মান কিং সলেমন পুরষ্কার ছিনিয়ে সৌদির ফুটবল মানচিত্রে নাম লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চির তরুণ। তাতে অবশ্য বিশ্বজনতার কাছে পরিচিত পাননি বর্তমানে আল হেলালের ( সৌদি আরবের ক্লাব) তেকাঠির নিচে ভরসা যোগানো। মঙ্গলে মেসি, ডি মারিয়া, তালিয়াফিকোদের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ করে বিশ্ব ফুটবল জনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন শাবাব আর আল আহলির প্রাক্তনী ওয়াইস।

সবুজকে কার্যত ফুৎকারে ওড়াবে নীল-সাদা। ফুটবল অনুরাগীদের ভাবনা তো তেমনই ছিল। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ম্যাচের বয়সের মাত্র দু মিনিটের মধ্যে বিশ্ব ফুটবলের বর্তমান ৫১ নম্বরের বুকে ধরপড়ানি ধরিয়ে ৩ নম্বরের অধিনায়কের শট গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু জালের অনেক আগেই মঙ্গলে ফুটবল ঈশ্বরের বরাভয় আদায় করা ফুল স্লিভ হলুদ জার্সিকে পরাস্ত করতে পারল না। সাদার সঙ্গে সামান্য অংশে নীলের ছিটে দেওয়া গ্লাভসেই আটকে গেল লাতিন আমেরিকার জায়ান্টের শীর্ষ সারির একাদশ।

পেনাল্টি নিতে যাচ্ছেন ফুটবল গোলার্ধের অন্যতম শিল্পী। তাঁর সঙ্গে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলল ‘মাইন্ড গেম’। বারবার শিল্পীকে চোখ আর হাতের ইশারায় ডান দিকে বল মারতে প্রলুব্ধ করলেন ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর এ ধরিত্রীর প্রথম আলো বাতাস মাখা ওয়াইস। শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হলেন এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে ৪৩ ম্যাচ গোলরক্ষক। ডান দিকেই গেল বল আর বাঁ দিকে ঝাঁপালেন তিনি। আর তখন থেকেই হিসাব নিকেশ শুরু হল লাতিন আমেরিকার দেশের কাছে কত গোল হজম করতে হবে মধ্য প্রাচ্যের দেশটিকে। কিন্তু পাণ্ডুলিপির ভাবনার সঙ্গে দৃশ্যায়ন হল না। বরং ফুটবল ইতিহাসে আরও একটা অঘটননের সাক্ষী থাকল নানা কারণে বিতর্কের শিরোনামে থাকা কাতার বিশ্বকাপ।

ওয়াইস হয়তো পণ করেছিলেন, হে ফুটবল জনতার অন্যতম নয়নমণি তুমি পেনাল্টিতে আমায় পরাস্ত করতে পার, কিন্তু আর কোনওভাবেই পারবে না। বাক্যে যেমন পূর্ণচ্ছেদ না দিলে তা শেষ হয় না, তেমনই রেফারির লম্বা বাঁশি না বাজলে শেষ হয় না ম্যাচ। তাই তো একবারে শেষ লগ্নে গোল বাঁচাতে গিয়ে বিপক্ষ নয়, সতীর্থ ইয়াসের আর শাহরানির সঙ্গে সংঘর্ষের জড়িয়ে গেল ওয়াইসের হাঁটু। স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়তে হল শাহরানিকে। হতাশায় মাথা নিচু করে উপুড় গেল ৭৫ কেজি ওজনের শরীর। তবুও হাল ছাড়বে না সে শরীর। তাই তো ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগেও হুলিয়ান আলভারেজের হেড বাজ পাখির মতো তালুবন্দি করে কয়েক ফুট উপর থেকে মাটিতে আছড়ে পড়লেন একত্রিশ বছরের তরুণ।

আত্মা, শরীর আর মননের মিশেলে পোষ্টের নীচের ফুল ফুটিয়ে কখনও নিকোলাস তালিয়াফিকোর বা পায়ের শট কিংবা লিওনেল মেসির হেড অথবা ডি মারিয়া বুলেট শট বারবার থমকে দিলেন। আরব্য রজনীর নয়া উপ্যাখানের আলপনা আঁকলেন সৌদি জনতার নায়ক ওয়াইস।