সমীর সাহা, নদিয়া: পারিবারিক রীতি মেনে চতুর্থী থেকে নবদ্বীপের চন্দ্র বাড়ির ঠাকুর দালানে (Banedi Barir Pujo) শুরু হয়ে গিয়েছে পারিবারিক গান বাজনা। প্রথা মেনে পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে গানবাজনা। পূর্বপুরুষদের তৈরি কলকাতার বাড়ি ভাড়া থেকে বংশপরম্পরায় ধরে বৈষ্ণবীয় মতে পুজো হয়ে আসছে নদিয়ার নবদ্বীপের চন্দ্রবাড়ীর দেবীদুর্গার।
পাশাপাশি পুজোর দিনগুলিতে নাট মন্দিরে চলে পারিবারিক গান বাজনা (Banedi Barir Pujo)। বংশপরম্পরায় ধরে নবদ্বীপের চন্দ্র বাড়িতে এই রীতি চলে আসছে। বাংলা ১২৯০ সালে পূজার সূচনা হয়েছিল। প্রায় ১৩৮ বছরের পুজো। বর্তমান প্রজন্ম সুশোভন চন্দ্র জানান, পিতামহ নীলমণি চন্দ্রের হাত ধরে পূজোর সূচনা হয়েছিল। এক চালা দুর্গা প্রতিমা, (Banedi Barir Pujo) মাটির সাজে সজ্জিত দেবী। এখানে দেবীর বাহন সিংহ নরসিংহ ঘোড়ার মত দেখতে। পুজোর দিনগুলোতে দেবীকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। ২৪টা লুচি, ২৪ টা ভাজা, ২৪টা মিষ্টি অর্থাৎ যা কিছু ভোগ দেওয়া হবে তা সংখ্যায় ২৪টি হতে হবে, এই নিয়মই চলে আসছে। আখ, চাল কুমড়ো বলি প্রথা থাকলেও এখন বলি না দিয়ে উৎসর্গ করা হয় বলে জানান সুশোভনবাবু।
বিশেষত্ব এই প্রতিমা বেয়ারাদের কাঁধে চেপে গঙ্গায় বিসর্জিত হন। ভোগ হিসাবে এক একটি পদ ২৪টা করে দিতে হয়। অতিমারির কারণে এই বছর অনেক নিয়ম বদলাতে হয়েছে। দেবীর উদ্দেশ্যে (Banedi Barir Pujo) ভোগ যেমন ২৪টা করে বিভিন্ন পদ দেওয়ার রীতি রয়েছে। ঠিক তেমনি ২৪ জন বেয়ারাদের কাঁধে চেপে প্রতি বছরই বাপের বাড়ি থেকে দেবী দুর্গা ফিরে যেতেন কৈলাসে।
এবার অতিমারী করোনা আবহে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে, দূরত্বের বজায় রাখার কথা মাথায় রেখে সেই প্রথা হয়তো রাখা সম্ভব নয় বলে জানালেন চন্দ্রবাড়ির বর্তমান সদস্য। সেকারণে এবছর প্রতিমার উচ্চতা কমিয়ে দিতে হয়েছে। প্রতিমা এবার তৈরি হয়েছে পাল বাড়িতেই।
কলকাতার খিদিরপুরে বাড়ির ভাড়া থেকেই বছর বছর পুজোর খরচ করা হয়। বাড়ির ভাড়াটিয়াদের থেকে মাসে মাসে ভাড়া নেওয়া হয় না। পুজোর আগে বছরে একবারই ভাড়া নেওয়া হয়। তা দিয়েই পুজোর খরচ চলে। তবে সাবেকি ভাড়া খুবই সামান্য, সেকারণে কিছু বাড়তি খরচ বাড়ির সদস্যকে বহন করতে হয় বলে জানান তিনি।
চন্দ্রবাড়ির গৃহবধূ পারুলদেবী জানান, তিন শরিকের পুজো হলেই এখন মাত্র একজন শরিকই এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেকি সেই দুর্গা মণ্ডপে পুজোর দিনগুলিতে নাট মন্দিরে পারিবারিক গান বাজনা প্রথা আজও একই ভাবে চলে আসছে। এবার করোনা পরিস্থিতি তাদের অনেক নিয়মকে ওলট পালট করে দিয়েছে।
তবুও সব কিছু দূরে সরিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মা আসছেন। সেই আনন্দে বিভোর চন্দ্র বাড়ির সদস্যরা। তবে এবার দূর থেকে মাকে দর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। সব রকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান চন্দ্র বাড়ির সদস্যরা।