পল্লব হাজরা, বরাহনগর: বরাহনগর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রোড ধরে গঙ্গার দিকে হেঁটে গেলে ৬০/১ রামচন্দ্র বাগচী লেনে দেখা মিলবে প্রাচীন এক অট্টালিকা। এই অট্টালিকার প্রত্যেক ইটের কোনায় কোনায় রয়েছে নানান ইতিহাসের ছাপ। কারণ ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটির নাম আলমবাজার মঠ । যা রামকৃষ্ণ সংঘের দ্বিতীয় মঠ ।স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিকে আকড়ে এখনও দাঁড়িয়ে বরাহনগর আলমবাজার মঠ। বয়সের ভারে ক্লান্ত মঠের বেশির ভাগ অংশে খসে পড়েছে পলেস্তারা। প্রশাসনের পক্ষে থেকে লাগানো হয়েছে বিপদজনক বাড়ির নোটিশ।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের অন্তর্ধানের পর স্বামীজী উদ্যানবাটি ছেড়ে ১৮৮৬ সালে গুরুভ্রাতার সহিত চলে আসেন বরাহনগর পরামাণিক ঘাট রোডের টাকির মুন্সীদের বাড়িতে। পাঁচ বছরের বেশ কিছু সময় তারা এখানে বাস করেছিলেন। তারপর রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের উৎসভূমি এই মঠ বরাহনগর মঠ নামে পরিচিতি পায়।
এদিকে বরাহনগর মঠের সেই সময় জীর্ণকায়দশা তার উপর সাপের উপদ্রব। যার কারণে দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের প্রায় আধ মাইল দূরে চলে আসেন সকলে। এই আলমবাজার মঠ যা শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাআন্দোলনে দ্বিতীয় মঠ।
আজ শনিবার বিকেলে সেই ঐতিহাসিক আলমবাজার মঠ রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে হস্তান্তরিত হল। আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে সূচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠ বেলুড় মঠের সহ সংঘাদ্যক্ষ স্বামী গৌতমানন্দ মহারাজ, রামকৃষ্ণ মঠ ও বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বরাহনগরের প্রেসিডেন্ট গৌরানন্দ মহারাজ, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক সারদাত্মানন্দ মহারাজ, দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ সংঘ আদ্যাপীঠের সাধারণ সম্পাদক মুড়াল ভাই সহ বিশিষ্ট জনেরা। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায়,ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজরিয়া, বিধায়ক তাপস রায়,বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক।
মঠের সম্পাদক স্বামী সারদাত্মানন্দ জানান এই ঐতিহাসিক আলমবাজার মঠ শ্রী রামকৃষ্ণ ভাবান্দলনের দ্বিতীয় মঠ। স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরুভাইরা এই মঠে ১৮৯২ থেকে ১৮৯৮ পর্যন্ত ছিলেন। স্বামীজী পাশ্চাত্য শিকাগো শহরের ধর্ম মহাসভার পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ সালে কলকাতায় ফিরে এই মঠে উপস্থিত হন। সেই বছরই স্বামীজী গুরুভাইদের নিয়ে রামকৃষ্ণ সংঘের গোড়াপত্তন করেন। ঠিক করা হয় সংঘের নিয়ম কানুন। পরবর্তী সময়ে বেলুড় মঠের সূচনা হয় এই মঠ থেকেই। ১৮৯৮ সালে এই মঠ বেলুড়ে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এই মঠটি সংস্কারের প্রয়োজন সাথে সাথে সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করা হবে। যা এই মঠ কতৃপক্ষের একা করা সম্ভব নয় । তাই বেলুড় মঠ কাছে হস্তান্তরিত করা হলো। সংগ্রহশালাটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ছয় কোটি টাকা। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে প্রায় দুই বছর।
অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বরাহনগর আলমবাজার মঠ রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে হস্তান্তরিত হওয়ার খুশি সাধারণ মানুষ থেকে মঠ কর্তৃপক্ষ। আগামী দিনে নতুন ভাবে মঠ সংস্কারে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।